আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলো বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। আল বায়াত স্টেডিয়ামে বুধবার দিবাগত রাত ১টায় মরক্কোকে ২-০ গোলে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ফ্রান্স। টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলো ফ্রান্স। ফ্রান্সের হয়ে গোল দুটি করেন থিও হার্নান্দেজ ও কোলো মুয়ানি। ১৮ ডিসেম্বর আইকনিক লুসাইলে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা ট্রফি ধরে রাখার মিশনে লড়বে উড়তে থাকা লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার বিপক্ষে।
থিও হার্নান্দেজের বা পায়ের দারুণ শটে ম্যাচের ৫ মিনিটের মাথায় ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো প্রতিপক্ষ ফুটবলারের কাছ থেকে গোল হজম করলো মরক্কো।
এক গোল খেলেও দারুণভাবে খেলতে থাকে মরক্কো। ১১ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে উনাহির দূরপাল্লার শট বা পাশে ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন ফ্রেঞ্চ গোলরক্ষক হুগো লরিস।
১৮ মিনিটে আবারও গোলের সুযোগ পায় মরক্কো। বৌফালের পাস থেকে ডি বক্সে বল পেলেও বা পায়ের দুর্বল শটে গোল করতে ব্যর্থ হন জিয়েচ।
এর ঠিক এক মিনিট পর সুযোগ পেয়েছিল ফ্রান্সও। ডি বক্সের ভেতর গোলরক্ষককে একা পেয়ে বা পায়ে শট নেন জিরুড। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বারে লেগে বল চলে যায় বাইরে।
৩৬ মিনিটে দারুণ এক কাউন্টার অ্যাটাকে মরক্কোর রক্ষণভাগে ভয় ধরিয়ে দেন এমবাপে ও জিরুড। এমবাপের পেসের কাছে পরাস্ত হন মরক্কোর ডিফেন্ডার। ফলে এমবাপের দুর্বল শট ক্লিয়ার করেন মরক্কোর ডিফেন্ডার। কিন্তু ফোফানার পাস থেকে দারুণভাবে একা বল পেয়ে গোলবারের বাইরে শট নেন জিরুড।
৪১ মিনিটে গ্রিজম্যানের কর্নার থেকে ভারানের ডান পায়ের শট আবারও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বাইরে চলে যায়। ম্যাচের ৪৭ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার দারুণ সুযোগ পায় মরক্কো। কিন্তু এল ইয়ামিকের ওভার হেড কিক গোলবারে লেগে প্রতিহত হয়, ফলে গোলবঞ্চিত হয় মরক্কো।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আরও আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে মরক্কো। ৫৫ মিনিটে ফ্রেঞ্চ রক্ষণভাগে ভয় ধরিয়ে দেন মরক্কোর ফুটবলাররা। বৌফাল, এল নাসিরের দুই প্রচেষ্টা রুখে দেন ভারান ও থিও হার্নান্দেজ।
পুরো ম্যাচে দারুণভাবে বল দখলে নিয়ে খেলতে থাকে মরক্কো। কিন্তু আক্রমণভাগে গিয়েই যেন খেই হারিয়ে ফেলছিল তাদের ফুটবলাররা।
মরক্কোর ভুলের খেসারত দিতে হয় ৮০ মিনিটে। দারুণ এক কাউন্টার অ্যাটাক থেকে এমবাপের একক নৈপুণ্যে ডিবক্সের ভেতর শট নিলে সেট প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে যায় কোলো মুয়ানির কাছে৷ এমন সুযোগ আর তিনি মিস করেননি। বদলি হিসেবে নামার দুই মিনিটের ভেতরেই ফ্রান্সের জার্সি গায়ে নিজের প্রথম গোলটি করেন তিনি।
দুই গোলে পিছিয়ে থেকে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি মরক্কো। ৯২ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে মরক্কোর উনাহির শট চলে যায় গোলবারের ওপর দিয়ে। শেষদিকে আরও কয়েকবার ফ্রান্স আক্রমণভাগে বল নিয়ে ঢুকলেও ফিনিশিংটাই করতে পারেনি ফ্রান্স। ফলে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হলো মরক্কোকে।
শেষ পর্যন্ত এই ব্যবধানেই শেষ হাসি হাসে ফ্রান্স। মরক্কো হারলেও তারা লড়েছে দারুণভাবে। ফিনিশিংয়ে অভাবে শুধু গোলটা হয়নি। ম্যাচে ফরাসিরা আক্রমণ করেছে ১৪টি, যার মধ্যে দুটি অনটার্গেট শট, সেই দুটিই গোল। অন্যদিকে মরক্কো ১৩টি আক্রমণ করে, ২টি অনটার্গেট শটই ব্যর্থ হয়েছে।
১৯৫৮-১৯৬২ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের পর এই প্রথম কোনো ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দল শিরোপা জয়ের পথে। এ ছাড়া ১৯৯৮-২০০২ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের পর কোনো দল এই প্রথম টানা দুবার ফাইনাল খেলছে। ৯৮ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছে হারের পর ২০০২ বিশ্বকাপে জার্মানিকে হারিয়ে সবশেষ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল।
এই বিশ্বকাপে এটিই মরক্কোর প্রথম হার। আগের ৫টি ম্যাচের মধ্যে ৪টিতে জয় আর ১টিতে ড্র করেছে। এর আগে তারা সবশেষ হেরেছিল ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে, পর্তুগালের বিপক্ষে। নিজেরা আক্রমণ করলেও আসলে ফ্রান্সের আক্রমণের সঙ্গে পেরে ওঠেননি তারা।
মাহফুজা ১৫-১২