ঢাকাই সিনেমারে আলোচিত চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী। ব্যক্তিগত জীবনে শাকিব খানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তিনি এবং সংসার আলো করে জন্ম নিয়েছে একটি পুত্রসন্তান। এ খবর প্রকাশ্যে আসার পর বুবলী বলেছিলেন— সংবাদসম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন।
শাকিব-বুবলী-অপু বিশ্বাসের ভার্চুয়াল লড়াই শেষ হতে না হতেই এবার ফেসবুকে ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন বুবলী।
রোববার রাতে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ একটি ভিডিও বার্তায় শাকিব-অপুর সংসার এবং শাকিব খানের সঙ্গে সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে কথা বললেন বুবলী। অভিনেত্রী জানান, তিনি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন না কিছু মানুষের কিছু প্রশ্নের উত্তর দেবেন।আধাঘণ্টারও বেশি সময়ের ভিডিওতে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। এমনকি কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন বুবলী। তার এ ভিডিওতে সাংবাদিক, ভক্ত-অনুরাগীদের জানিয়েছেন অনেক না বলা ও অজানা কথা।
বেবি বাম্প দিয়ে শুরু, পরে শাকিব খানের সঙ্গে বিয়ের খবর, সন্তান শেহজাদ খান বীরকে সামনে আনা, বিয়ের তারিখ জানানো, সন্তানের জন্মতারিখ প্রকাশ করেন অভিনেত্রী বুবলী।
বুবলী বলেন—‘২০১৬ সালে আমি যখন চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করি। তখন শাকিব খান মেন্টর হিসেবে গাইড করতেনএবং ওনার মাধ্যমে আমার ফিল্মে কাজ করার সুযোগ হয়। ওই সময়ে শাকিব খান কারো সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন, এ খবর আমি যেমন জানতাম না, তেমনি সাধারণ মানুষও জানতেন না। বরং খবরে দেখেছি, তিনি বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছেন। ২০১৭ সালে তার বিয়ে-সন্তানের বিষয়গুলো সবার মতো আমিও জানতে পারি।’
শাকিবের সঙ্গে সিনেমায় কাজ শুরু করার পরই পরস্পরের মাঝে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে বিষয়টি তা নয়। এ বিষয়ে বুবলী বলেন, ‘শাকিব খানের সঙ্গে প্রথম সিনেমা করতে গিয়ে ভালো লাগা তৈরি হয়েছে তা নয়। সময়ের সঙ্গে আস্তে আস্তে আমাদের মাঝে ভালো লাগা তৈরি হয়। কারণ আমরা সবাই পেশাদারিত্বের জায়গাটি ঠিক রেখে কাজ করছিলাম। কিন্তু উনি চাচ্ছিলেন সেটল হতে।
বুবলী বলেন, ‘উনি অপু বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন। অপু বিশ্বাস আমার অনেক সিনিয়র এবং অনেক বছর ধরে উনি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন। ওনার সঙ্গে সামনাসামনি কখনো দেখা হয়নি। ২০১৭ সালে লাইভ অনুষ্ঠানে আসার আগে উনি (অপু বিশ্বাস) ফোন করে আমার সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছিলেন। আমি জানতামও না উনি আমার সঙ্গে কেন এমনটা করছিলেন। কারণ উনি আমাকে কিছু জিজ্ঞাসাও করেননি, কোনো কিছু ক্রস চেকও করেননি। কিন্তু আমার সঙ্গে খুব বাজে ব্যবহার করেছিলেন। ওই মুহূর্তের জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। পরবর্তীতে কষ্ট থেকে এ বিষয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছিলাম।’
‘আমি যদি জানতাম শাকিব খান-অপু বিশ্বাস এমন জটিল সময় পার করছেন, তাহলে আমি এখানে কখনই যুক্ত হতাম না। সবকিছু জেনেশুনে কোনো ধরনের সমস্যা তৈরি করার মানসিকতা আমার নেই। যারা আমাকে কাছ থেকে দেখেছেন তারা বিষয়টি জানেন।’ বলেন বুবলী।
অনেকবার অভিযোগ উঠেছে বুবলীর কারণে শাকিব-অপুর সংসার ভেঙেছে। বলী বলেন, ‘‘আমি শাকিব খানকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। উনি বলেছিলেন, ‘আমি অনেক দিন ধরেই এ বিষয়ে তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছিলাম এবং এখানে তুমি সম্পৃক্ত নও।’ কিন্তু পরবর্তীতে আমাকেই দোষারোপ করা হলো। এটা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমার কারণে কারো সংসার ভাঙেনি।’’ ‘অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় অপু বিশ্বাস যখন গোপনে আড়ালে চলে যান তখন আমি ছিলাম না। তারপরও আমাকে কেন দোষারোপ করা হয়?
ফাইনালি শাকিব-অপুর বিয়েবিচ্ছেদ ঘটে। এটা তো তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তারা দুজনেই ম্যাচিউর মানুষ।! বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত যদি তাদের দুজনের না থাকে তবে বাইরে থেকে কেউ এসে এটা করাতে পারে না। একজন মানুষ যদি একটা সম্পর্কে থাকার পর আরেকটি বিয়ে করে; যাকে বিয়ে করলেন এটা কি তার ভুল?’
বুবলী বলেন, ‘‘শাকিব খান আমাকে বলেছিলেন, ‘এই সম্পর্কে আমি সুখী নই।’ তার জায়গা থেকে আরো অনেক কথা আমাকে বলেছিলেন। কিন্তু কারো কারো সম্মান রক্ষার্থে কথাগুলো আগেও বলিনি, এখনো বলছি না। শাকিব খান এও বলেছিলেন, ‘একটি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আমি যদি নতুন একটি সম্পর্কে জড়াই তাহলে সেখানে তো তোমার কোনো দোষ নেই।’
শাকিব-অপুর পুত্র জয়ের জন্মদিনে নিজের বেবি বাম্পের ছবি প্রকাশ্যে আনেন বুবলী। দেখুন, জয়ের ব্যাপারে আমি আমার স্বামী শাকিব খানকে কতটা পজিটিভলি দেখতে বলি, তা উনি জানেন। ওনার যারা কাছের মানুষ আছেন, তারাও জানেন। জয়ের সুন্দর একটা ভবিষ্যতের জন্য সবরকম পরামর্শ আমি দিয়েছি। আমার বেবি বাম্পের ছবি জয়ের জন্মদিনে প্রকাশ করেছি, তা ঠিক আছে। কিন্তু বিষয়টা এভাবে ভেবে করিনি।
’ভিডিওর একদম শেষের অংশে বুবলী বলেন, কিছু জিনিস শেয়ার করেছি আমার সন্তানের জন্য। ও তো বড় হচ্ছে এবং আপনারা অনেক সময় ওকেও বিভিন্ন বিষয়ে ইনভলব করেন। ওর কোনো দোষ নেই, ও তো ছোট মানুষ। ওর তো তিন বছর প্রায়। আমরা চেয়েছিলাম যে, আমরা একসঙ্গে খুব সুন্দরভাবে ওকে সামনে আনার, হয়তো হচ্ছিল না কোনোভাবে। আমি তো অলরেডি তিন বছর ওয়েট করেছি। ওর বিষয়টা সামনে আনার পরেও কিন্তু আমি কারো বিষয়ে কোনো অভিযোগ করিনি, আজও করছি না।
সন্তান সেহজাদের উদ্দেশে বুবলী বলেন, বাবা শেহজাদ, মা হয়ে তোমার পাশে সারা জীবন থাকব না বাবা। কিন্তু অন্যান্য মায়ের মতো তোমার জন্য অনেক কষ্ট করেছি এবং করছি। তোমাকে পৃথিবীতে আনা, তোমাকে বড় করা। আমি সব সময় তোমার পাশে ছিলাম, আছি, থাকব। তুমি মানুষের মতো মানুষ হও বাবা এবং একটি কথা মনে রেখ, তোমার মা-বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসে। আমি হয়তো আমার জায়গা থেকে সব সময় তোমাকে সেরাটা দিতে পারি না। তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
মাহফুজা ৪-১২