১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

    সর্বশেষ খবর

    একই দিনে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু, অলৌকিক ইচ্ছা পূরণ

    জীবিত অবস্থায় দু’জনের একটাই চাওয়া ছিলো একত্রে যেন মৃত্যু হয়। স্বামী-স্ত্রীর কারো যেন ছেলে কিংবা ছেলে বউয়ের মুখাপেক্ষি হতে না হয় । একা একা অসহায় জীবন যেন কাটাতে না হয়। জীবিত থাকা অবস্থায় দু’জনই এমন কামনা করতেন। হলেও তাই । স্বামীর মৃত্যুর বারো ঘন্টার ব্যবধানে মারা যান স্ত্রীও । এক রাতও একা একা থাকতে হয়নি স্বামী-স্ত্রীর। মৃত্যুর পরও পাশাপাশি কবরে রাখা হয়েছে। মরেও যে ভালবাসার প্রমান রেখে গেলেন এই দম্পতি। আজগার তহিদা

    রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের ইন্দিরাপাড়া গ্রামের আজগার আলীর সঙ্গে তহিদা খাতুনের বিয়ে হয় প্রায়  পাঁচ যুগ আগে। ষাট বছর ধরে সংসার করেছে এ দম্পতি। তাদের দুজনের মধ্যে ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের কমতি ছিল না। দীর্ঘ সংসার জীবনে ঘাত-প্রতিঘাত সামলেছেন একসঙ্গে। কখনো পরস্পরকে ছেড়ে থাকতেন না তারা।

    বেঁচে থাকতে সব সময় কামনা করতেন একসঙ্গে যেন মৃত্যু হয়। ইচ্ছে ছিল পাশাপাশি সমাধিস্থ হওয়ার। তাদের সেই ইচ্ছাই পূরণ হয়েছে। একই দিনে পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন এই বয়স্ক দম্পতি।

    বৃহস্পতিবার ১৪ মার্চ ভোরে আশি বছরের আজগার আলী এবং একই দিনে রাত ৮টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তার স্ত্রী  ৭২ বছরের তহিদা খাতুন। আল্লাহ তাদের দীর্ঘদিনের পবিত্র চাওয়াকে পূর্ণতা দিয়েছেন মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।

    আজগার আলীর ভাতিজা নুরু মিয়া জানান, বুধবার ১৩ মার্চ দিবাগত রাতে একসঙ্গে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন ওই দম্পতি। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন তহিদা খাতুন। এ সময় ডাকাডাকি করেও স্বামীর সাড়া পাননি। তার কান্না শুনে বাড়ির অন্য লোকজন ছুটে আসেন। তখন তারা বুঝতে পারেন আজগর আলী মারা গেছেন।স্বজনেরা জানিয়েছেন, আজগার আলী ছিলেন কৃষক। তিনি কিছুদিন ধরে অ্যাজমা রোগে ভুগলেও গৃহিণী তহিদা খাতুনের তেমন কোনো রোগ ছিল না।

    স্থানীয় ইউপি সদস্য শামসুল হক জানান, আজগার আলীর মৃত্যুর পর থেকে স্ত্রী তহিদা খাতুন শোকার্ত ছিলেন। বৃহস্পতিবার বাদ যোহর জানাজা শেষে বাড়ির পাশেই পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় আজগর আলীকে। জানাজা ও দাফনকার্যে অংশগ্রহণকারী স্বজনদের অনেকটা শক্ত মনে বিদায় দেন তহিদা খাতুন। রাত ৮টার দিকে বাড়িতে হঠাৎ মাথা ঘুরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তাৎক্ষণিক মারা যান তহিদাও। পরে মধ্যরাতে জানাজা শেষে স্বামীর কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হয়।

    ওই দম্পতির সন্তান লাভলু মিয়া বলেন, আমার বাবা-মায়ের মধ্যে যে ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব ছিল, তা এ যুগের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সাধারণত দেখতে পাই না। জীবদ্দশায় বাবা-মা সব সময় কামনা করতেন একসঙ্গে তাদের যেন মৃত্যু হয়। আল্লাহ তাদের সেই মনোবাসনা পূর্ণ করেছেন।

     

    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    আলোচিত খবর