৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

    সর্বশেষ খবর

    ‘দ্য মোদি কোশ্চেন’ নামে বিবিসির প্রকাশিত তথ্যচিত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে ভারত সুপ্রিম কোর্ট

    নরেন্দ্র মোদি ও ২০০২ সালে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে হওয়া গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে ‘দ্য মোদি কোশ্চেন’ নামে বিবিসির প্রকাশিত তথ্যচিত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে ভারত । এবার তথ্য সম্প্রচারকারী সংস্থা বিবিসিকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হয়েছে।

    ভারত এবং কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ‘বৈষম্যমূলক’ আচরণ করেছে বিবিসি— এমন অভিযোগ এনে সুপ্রিম কোর্টে করা আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদির ওপর তৈরি তথ্যচিত্রটি ভারত ও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। ‘হিন্দু সেনা’ সভাপতি বিষ্ণু গুপ্ত ও বীরেন্দ্রকুমার সিংহ নামের একজনের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থে মামলাটি করা হয়েছে।

    আবেদনটিকে জরুরি তালিকাভুক্তির জন্য আবেদনকারীদের শুক্রবার নির্দেশ দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

    শুক্রবার সেই পিটিশনের ওপর শুনানি শেষের আদেশে এই নোটিশ জারি করেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি এমএম সুন্দ্রেশের ডিভিশন বেঞ্চ। আদেশে ডিভিশন বেঞ্চ বলেন, ‘আমরা নোটিস জারি করছি। তিন সপ্তাহের মধ্যে নথি-সহ হলফনামা জমা করতে হবে। তার পরের দুই সপ্তাহের মধ্যে তথ্যচিত্র নিয়ে আপত্তির কারণ জানাতে হবে।’

    বিবিসি ও সংস্থার কর্মীদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তদন্তের দাবি তুলেও আদালতে একটি মামলা হয়েছে। ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চে আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়েছে।

    অন্যদিকে বিবিসির তথ্যচিত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করার কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেও পাল্টা আবেদন করা হয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে। সোমবার ওই আবেদনের শুনানি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

    বৃহস্পতিবার ব্রিটেনে প্রবাসী ভারতীয়রা বিবিসি এবং ওই তথ্যচিত্রটি ঘিরে বিক্ষোভ দেখানোর পর সে দেশের সরকার জানিয়েছে, এই সংস্থা সম্পূর্ণভাবে ‘স্বাধীন’।

    গুজরাটের দাঙ্গা ও তার সঙ্গে মোদির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির তথ্যচিত্র ‘মোদি : দ্য কোশ্চেন’ নিয়ে সম্প্রতি তোলপাড় শুরু হয়েছে ভারতের রাজনীতিতে। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরোধী বিভিন্ন দল ও তাদের ছাত্রসংগঠনগুলো রাজধানী দিল্লিসহ বিভিন্ন রাজ্যে প্রোজেক্টরে এই তথ্যচিত্র প্রদর্শন করতে গিয়ে ব্যাপক পুলিশি ধরপাকড়ের শিকার হচ্ছে। কয়েক দিন আগে এক আদেশে ভারতে এই তথ্যচিত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধ করার পাশপাশি টুইটারসহ সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তথ্যচিত্রের লিংক মুছে ফেলার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্যমন্ত্রণালয়।

    কেন্দ্রীয় সরকারের এ আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে দু’টো পিটিশন জমা দেওয়া হয়েছিল। একটি দিয়েছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট লোকসভার তৃণমূল কংগ্রেস মহুয়া মৈত্র, জেষ্ঠ্য সাংবাদিক এন রাম এবং আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ; দ্বিতীয়টি জমা দিয়েছিলেন প্রশান্ত ভূষণ নিজেই।

    গত ১৭ জানুয়ারি ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোশ্চেন’ নামের একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে বিবিসি২ টেলিভিশন চ্যানেল। মূল বিবিসিরই একটি শাখা এই বিবিসি২ চ্যানেল।

    তথ্যচিত্রটিতে প্রধানত দেখানো হয়েছে, কীভাবে ২০০২ সালে গুজরাটের ভয়াবহ দাঙ্গাকে ব্যবহার করে ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন। এমন অনেক কথাই অবশ্য ছবিটিতে বলা হয়েছে, যা নতুন নয়; কিন্তু যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত এক জায়গায় এনে বিবিসি একটি তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছে। আর তত্ত্বটি হলো, গুজরাট দাঙ্গা মোদিকে প্রধানমন্ত্রী হতে সাহায্য করেছে।

    বিবিসিতে ‘দ্য মোদি কোশ্চেন’ নামের তথ্যচিত্র নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তির কথা জানিয়েছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারএবং নিষিদ্ধও করা হয়েছে তথ্যচিত্রটি। একে ‘অপপ্রচার’ আখ্যা দিয়ে দাবি করা হয়েছে, তথ্যচিত্রটি ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে তৈরি হয়েছে। যদিও বিবিসির দাবি, যথেষ্ট গবেষণা করে তথ্যচিত্রটি তৈরি করা হয়েছে। মোদি সরকারের ওই পদক্ষেপকে বিরোধী দলের নেতারা ‘সেন্সরশিপ’ আখ্যা দিয়েছেন। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে তথ্যচিত্রটি নিষিদ্ধ করার পরও ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যচিত্রটি দেখানো হচ্ছে।

    মাহফুজা ৩-১

     

    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    আলোচিত খবর