শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত পাঠ্যবইয়ে বিদ্যমান ভুল সংশোধন এবং ভুলের ক্ষেত্রে কারও গাফিলতি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে দুটি কমিটি গঠন করেছে। একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং অপরটি তদন্ত কমিটি।
বিশেষজ্ঞ কমিটি নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ভুল বা অসঙ্গতি চিহ্নিত করে তা সংশোধনের সুপারিশ করবে। কারও গাফিলতি বা ইচ্ছাকৃত ভুল ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি। বিশেষজ্ঞ কমিটিকে এক মাসের মধ্যে ও তদন্ত কমিটিকে তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার এ দুই কমিটি গঠন করে আদেশ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।
বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. আবদুল হালিমকে। আর প্রশাসনিক কমিটির প্রধান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তারকে।
জানা গেছে, বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. আব্দুল হালিমকে। সদস্য হিসেবে আছেন— আইইআরের অধ্যাপক এম ওয়াহিদুজ্জামান, এনসিটিবির সদস্য মো. লুৎফর রহমান, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের একজন উপসচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুন্নাহার শাহীন। এ কমিটিতে সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজিজ উদ্দিন।
বিশেষজ্ঞ কমিটিতে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. অহিদুজ্জামানকে প্রধান করার সিদ্ধান্ত হলেও পরে তা পরিবর্তন করা হয়। এখন তিনি কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন।’
তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তারকে। এ কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন—একই বিভাগের যুগ্ম সচিব মোল্লা মিজানুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন পরিচালক, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের একজন উপ-সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক সিরাজুল ইসলাম খান, বিএএফ শাহীন স্কুলের সহকারী শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নান মিয়া। সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন উপ-সচিব মো. মিজানুর রহমান।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞ কমিটি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের অসঙ্গতি ও ভুল চিহ্নিত করে তা সংশোধনে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে। এ কমিটি এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রয়োজনে কমিটি দুই-তিনজন বিশেষজ্ঞের মতামত নিতে পারবে।
অপরদিকে, তদন্ত কমিটি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইয়ের অসঙ্গতি ও ভুল তথ্য পর্যালোচনা করে এ কাজে কারও গাফিলতি বা ইচ্ছাকৃত ভুল ছিল কি না, তা চিহ্নিত করে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। এ কমিটিকে তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটি প্রয়োজনে এনসিটিবির সহযোগিতা নিতে পারবে।
২০২৩ সালের নতুন পাঠ্যবইয়ে ভুল ও অসঙ্গতি বিষয়ে গত ২৪ জানুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে দুটি কমিটি গঠনের কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পাঠ্যবইয়ে ভুল চিহ্নিত করে তা সংশোধন করতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কেউ ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল করেছে কি না, তার তদন্ত করতে আরেকটি কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।
সেদিন শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, পাঠ্যপুস্তক নিয়ে নানা আলোচনা দেখা যাচ্ছে। সেখানে ধর্মীয় বিষয় নিয়েও বেশ কিছু আলোচনা আছে। এ জন্য দুটি কমিটি করা হচ্ছে। রোববারের (গত) মধ্যে বিস্তারিত জানানো হবে। একটি কমিটি হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানসিক স্বাস্থ্য এবং ধর্মীয় বিষয়ের বিশেষজ্ঞরাও কমিটিতে থাকবেন। এ বিষয়ে একটি লিংক দেওয়া হবে, যেখানে দেশ-বিদেশ থেকে যেকোনো বই নিয়ে মত, আপত্তি বা পরামর্শ দেওয়া যাবে। ভুল থাকলে অবশ্যই সংশোধন করা হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
মাহফুজা ৩১-১