পাকিস্থানে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। জাতীয় গ্রিডে বড় ধরনের বিপর্যয়ের কারণে স্থানীয় সময় সোমবার ভোর থেকে দেশটির বেশিরভাগ অঞ্চল বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।পরিস্থিতি এতোটাই ব্যাপক যে, ফেডারেল ইসলামাবাদের পাশাপাশি লাহোর ও করাচির মতো বড় শহরসহ দেশের বিশাল অংশে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রভাব পড়েছে।
সোমবার সকালে এই বিভ্রাট দেখা দেয় বলে জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন। পাকিস্তানের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় গ্রিডের ফ্রিকোয়েন্সি হ্রাস পাওয়ার পরে সোমবার সকালে পাকিস্তানজুড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, করাচির মালির, ল্যান্ডি, গুলিস্তান-ই-জোহর, আখতার কলোনি, দ্বিতীয় চুন্দ্রিগার রোড, নিউ করাচি, গুলশান, ইব্রাহিম হায়দারি এবং কোরাঙ্গিতেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের খবর পাওয়া গেছে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ট্রান্সমিশন লাইনে ত্রুটির কারণে সোমবার দেশটির বিভিন্ন অংশে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছে। পাকিস্তান ইতোমধ্যেই বিদ্যুতের ঘাটতিতে রয়েছে। বিদ্যুৎ বাঁচাতে রাত ৮টার মধ্যে সব মার্কেট বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
কোয়েটা, ইসলামাবাদ, লাহোর, পেশোয়ার এবং করাচিসহ বেলুচিস্তানের ২২টি জেলা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়েছে। লাহোরের মল রোড, ক্যানাল রোড এবং অন্যান্য এলাকার মানুষ বিদ্যুতের সংকটে পড়েছেন।
দেশটির বিদ্যুৎ বিভাগ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এদিন সকাল ৭টা ৩৪ মিনিটে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় ঘটেছে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
পাকিস্তানের বিদ্যুৎ ও জ্বালানিমন্ত্রী খুররম দস্তগীর জিও নিউজকে বলেছেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে জ্বালানি খরচ বাঁচাতে শীতকালে রাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিটগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। তিনি বলেন, ‘আজ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে যখন সিস্টেমগুলো একে একে চালু করা হয়, তখন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জামশোর এবং দাদুর মধ্যে ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তনের খবর পাওয়া গেছে। ভোল্টেজ ওঠা-নামায় একের পর এক বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট বন্ধ হয়ে যায়। তবে এটি বড় কোনো সংকট নয়।’ দস্তগীর আরও বলেন, পেশোয়ার এবং ইসলামাবাদে গ্রিড স্টেশন পুনরুদ্ধার শুরু হয়েছে। তার ভাষায়, ‘আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে পারি যে আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে সারা দেশে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু করা হবে।’
এদিকে এক টুইট বার্তায় কে-ইলেক্ট্রিকের মুখপাত্র ইমরান রানা নিশ্চিত করেছেন, দেশব্যাপী ব্রেকডাউনের ফলে করাচিতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, কেই টিম পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
এদিকে কোয়েটা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির মুখপাত্র মুহাম্মদ আফজাল ডন ডটকমকে বলেছেন, প্রদেশের তিনটি সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি দেখা গেছে। এর ফলে বেলুচিস্তানজুড়ে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে। ত্রুটি দেখা দেওয়া তিনটি সঞ্চালন লাইন হচ্ছে — ২২০কেভি উচ-সিব্বি, ২২০কেভি দাদু-খুজদার এবং ২২০কেভি ডেরা মুরাদ জামালি।
ডন বলছে, বেলুচিস্তানের ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে— রাজধানী কোয়েটা, পিশিন, কিল্লা আবদুল্লাহ, চমন, লোরালাই ঝাব, কিল্লা সাইফুল্লাহ, মাস্তুং, সিব্বি, জিয়ারাত, কালাত এবং খুজদার।
মুহাম্মদ আফজাল আরও বলেছেন, ন্যাশনাল ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডেসপ্যাচ কোম্পানির (এনটিডিসি) মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে রাজধানী ইসলামাবাদে ব্রেকডাউনের প্রভাব প্রায় ১১৭টি গ্রিড স্টেশনের ওপর পড়েছে বলে ইসলামাবাদ ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির মুখপাত্র জানিয়েছেন।
ডন ডটকমকে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণ সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং সিস্টেমটিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে।ইলেকট্রিক সিস্টেমের সম্পূর্ণ মেরামত করতে সময় লাগবে বলেও জানান এই মুখপাত্র।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে দেশটির মেট্রো পরিষেবাও ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বিড়ম্বনায় পড়েছেন যাত্রীরা। ইসলামাবাদ ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির ১১৭টি গ্রিড স্টেশনেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। এতে ইসলামাবাদ শহর এবং রাওয়ালপিন্ডি অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে।
মাহফুজা ২৩-১