বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাথে শেষ হলো রাসেল ডমিঙ্গো অধ্যায়। মঙ্গলবার রাতে জাতীয় দলের কোচ রাসেল ক্রেইগ ডমিঙ্গো বিসিবি
কে নিজের পদত্যাগপত্র পাঠান । নিজের সেই পদত্যাগপত্রে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আর ফিরতে চান না বলেও উল্লেখ করেন ডমিঙ্গো।
প্রোটিয়া কোচ পদত্যাগপত্রে কেবল পারিবারিক সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেছেন । এছাড়া বিসিবিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা দিয়েছেন।
পেশাদারিত্ব দেখিয়ে নিজ থেকে সরে গিয়েছেন বলে জানান বিসিবির পরিচালক ও ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস।
ডমিঙ্গো নিজ থেকে পদত্যাগ করায় বিসিবির ওপর চাপ কমেছে বলেই জানা যাচ্ছে। ভারত সিরিজের পরপরই তাকে রাখা হবে না জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিসিবি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরুর আগেই ডমিঙ্গো দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।
রাসেল ডমিঙ্গোর পদত্যাগপত্র নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘সে পদত্যাগ করেছে, এটা ঠিক আছে। গতকাল রাতে আমাদের সিইওকে একটা চিঠি দিয়েছে পদত্যাগের ইমিডিয়েট ইফ্যাক্ট। এখানে কোনো কারণ দেখায়নি। সে বিসিবিকে ধন্যবাদ জানিয়েছে, বোর্ড তাকে যে সাপোর্ট দিয়েছে এর জন্য। বাংলাদেশ দলকে শুভকামনা জানিয়েছে যেন ভবিষ্যতে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারে। চুক্তি অনুযায়ীই তার সঙ্গে সব ক্লোজ করা হবে।’
২০১৯ বিশ্বকাপের পরপরই কোচ নিয়োগে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল বিসিবি। মাত্র চারজন সেই বিজ্ঞাপন অনুযায়ী কোচ হতে আবেদন করেছিল। সেই চারজনের মধ্যে ছিলেন রাসেল ডমিঙ্গো।
২০১৯ সালের ৭ আগস্ট বিসিবিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন ডমিঙ্গো। তার প্রোফাইলে উচ্ছ্বসিত হয়ে বিসিবি তাকে নিয়োগ দেয়। শুরুতে দুই বছরের জন্য তার সঙ্গে চুক্তি করা হয়। ২০২১ সালে তার চুক্তি বাড়িয়ে ২০২৩ বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু মেয়াদ শেষের ১১ মাস আগেই সম্পর্ক ছিন্ন করলেন এ কোচ।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে টুকটাক খেলেছেন ডমিঙ্গো। তবে স্বীকৃতি কোনো টুর্নামেন্টে খেলার অভিজ্ঞতা নেই তার। তাই কোচিং পেশায় মনোযোগী হন।
২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা টি-টোয়েন্টি দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১১ সালে গ্যারি ক্রাস্টেন কোচ হওয়ার পর ডমিঙ্গো ডেপুটি হিসেবে প্রোটিয়া দলে কাজ করেন। ২০১৩ সালে তার কাঁধে জাতীয় দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখন দক্ষিণ আফ্রিকা ছিল নম্বর ওয়ান টেস্ট দল। এরপর চার বছর তার অধীনেই ছিল দল। ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রোটিয়াদের কোচ ছিলেন ৪৭ বছর বয়সী ডমিঙ্গো।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে স্টিভ রোডসের স্থলে টাইগারদের হেড কোচ হয়ে বাংলাদেশে আসেন রাসেল ডমিঙ্গো। তার অধীনে বেশ কিছু স্মরণীয় জয়ের সাক্ষী হয় টিম টাইগার্স। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারায় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্টে আসে স্মরণীয় জয়। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয় এবং সবশেষ ভারতের পূর্ণ শক্তির দলকে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ হারানোর মতো সাফল্যও আসে আফ্রিকান এ কোচের অধীনে।
তবে সাফল্যের বিপরীতে তার ব্যর্থতার পাল্লাও কম ভারী নয়। বিশেষ করে তার অধীনে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে বিবর্ণ বাংলাদেশ। ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল আসরে একটি ম্যাচও জেতেনি বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডে ঐতিহাসিক টেস্ট জিতলেও বাকি সময়টায় নড়বড়ে পারফরম্যান্স দেখা যায় সাদা পোশাকের ক্রিকেটে।
আর তাই ডমিঙ্গোর ওপর আস্থা কমছিল বিসিবির। তারই ধারাবাহিকতায় গত এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য শ্রীধরন শ্রীরামকে কাগজে-কলমে ‘টেকনিক্যাল কনসালটেন্টের’ আড়ালে প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় বিসিবি। এতেই স্পষ্ট ছিল, ডমিঙ্গোর ওপর আস্থা হারাচ্ছে বোর্ড। তেতো পরিস্থিতি টের পেয়ে নিজে থেকেই সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন ডমিঙ্গো।
মাহফুজা ২৮-১২