প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ বছর পর আগামীকাল রোববার রাজশাহী যাচ্ছেন।
রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে যাবেন নবীন বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শনে। এরপর দুপুরে রাজশাহীর মাদরাসা ময়দানে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের জনসভায় অংশ নিয়ে ভাষণ দেবেন। এই জনসভায় রাজশাহী ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে পাঁচ থেকে সাত লাখ নেতাকর্মীর উপস্থিতি আশা করা করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে রাজশাহী সেজেছে নতুন সাজে। নেতাদের ব্যানার-ফেস্টুন ও তোরণে ভরে গেছে পুরো শহর। ছিমছাম সাজানো-গোছানো শহরটিকে সাজানো হয়েছে আরও দৃষ্টিনন্দনভাবে। সড়ক বিভাজকগুলো নতুন করে রং করা হয়েছে। পদ্মাপাড়ের শহরটির এখানে-ওখানে দেখা মিলছে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকারও।
এদিকে, নেতাদের ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন ও তোরণে ভরে গেছে পুরো শহর। সড়ক বিভাজকগুলোতে করা হয়েছে রঙ। বিভিন্ন জায়গায় দেখা মিলছে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা। কেউ কেউ হাতে নৌকা নিয়ে ঘুরছে। কেউবা নিজের পছন্দের বাইককেই সাজিয়েছে নৌকার আদলে। এমনই একজনের সঙ্গে কথা হয়েছে সময় সংবাদের
শুক্রবার বিকালে সভার মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। মাঠও প্রস্তুত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ প্রচার করতে শহরজুড়ে আগেই লাগানো হয়েছে মাইক। মাঠের পরিধি বড় করতে দক্ষিণ পাশের সীমানা প্রাচীরটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এর দক্ষিণে থাকা ঈদগাহ ময়দানেও নেতাকর্মীরা অবস্থান নেবেন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের পক্ষ থেকে মাঠের পাশে বসানো হয়েছে অস্থায়ী টয়লেট। রাজশাহী ওয়াসা ব্যবস্থা করছে পানি সরবরাহের। মাঠের চারপাশে ইতোমধ্যে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শহরজুড়েও চলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর টহল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদরাসা ময়দান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীতে বাস্তবায়িত ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। এছাড়া ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী জনসভা থেকে উত্তরাঞ্চলের আরও উন্নয়নে নিজের চিন্তার কথা প্রকাশ করবেন বলে মনে করছেন দলীয় নেতারা।
সমাবেশের আগের দিনই অনেক নেতাকর্মী রাজশাহীতে অবস্থান করবেন। এজন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। কতটি গাড়ি রাজশাহীতে আসবে সেটারও তালিকা করা হয়েছে। জেলার নেতারা উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছেন। সমাবেশের আগেই যেন নেতা-কর্মীদের বহর নিয়ে রাজশাহী শহরে সকলে প্রবেশ করতে পারেন সে লক্ষ্যে যাবতীয় পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, রাজশাহীর বাইরে থেকে যারা আসবেন, তাদের জন্য সর্বোচ্চটা করার প্রচেষ্টা রয়েছে। এছাড়া সমাবেশ উপলক্ষে মাদরাসা মাঠসহ যে ১২টি পয়েন্টে ডিজিটাল মনিটরের মাধ্যমে লাইভ দেখানো হবে। সেখানকার জন্য ৫ শতাধিক স্বেচ্ছাবেসী কাজ করবেন। নির্বিঘ্নে যেন মানুষ আসতে পারে ও সমাবেশ সফল করতে পারে যে লক্ষে যাবতীয় প্রস্তুতিই নেওয়া হয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যাওয়া-আসার সুবিধায় সাতটি বিশেষ ট্রেন ভাড়া দিয়েছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন রুট থেকে এসব ট্রেন নেতাকর্মীদের নিয়ে আসবে এবং যাবে। আরও একটি ট্রেন ভাড়া দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার।
অসীম কুমার তালুকদার জানান, ‘আমাদের কাছে ১৫দিন আগে ট্রেন চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি সিটের যাওয়া-আসা ভাড়া হিসাব করে আগাম টাকা নিয়ে ট্রেন ভাড়া দিয়েছি। এ পর্যন্ত সাতটি ট্রেন ভাড়া দিয়েছে। আরও একটি ট্রেন দেওয়া হতে পারে। আমরা প্রায় ৩০ হাজার লোক আনা-নেওয়া করবো।’
প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে শনিবার সকালে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। তিনি আরও বলেন, ‘মাঠে জায়গা সংকুলান সম্ভব হবে না বলে আশপাশের সব সড়কেও নেতাকর্মীরা থাকবেন। এ জন্য ২০০টি মাইক লাগানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে যেন তারা দেখতে পান, সেজন্য ১২টি এলইডি স্ক্রিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেড় লাখ পানির বোতল সরবরাহ করা হবে মাঠে। রাজশাহী ওয়াসাও দুটি গাড়িতে পানি নিয়ে প্রস্তুত থাকবে। সকাল ৯টা থেকেই নেতাকর্মীরা মাঠে প্রবেশ করতে শুরু করবেন।
র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সব পর্যায়ে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। পোশাকে, সাদা পোশাকে সমাবেশস্থলসহ নগরী ও যে রুটে প্রধানমন্ত্রী আসবেন সেখানে গোয়েন্দা তৎপরতা আছে। এছাড়া সামাবেশের দিন মাঠে ১০ পেট্রোল র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া ৩টি রিজার্ভ পেট্রোল থাকবে। পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রধানমন্ত্রীর স্পেশাল ফোর্সের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
এদিকে মাদরাসা মাঠে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় এই সমাবেশকে সামনে রেখে রাজশাহী মহানগর এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ। ২৭ জানুয়ারি সকাল ৬টা থেকে ৩০ জানুয়ারি সকাল ৬টা পর্যন্ত সব ধরনের অস্ত্র-শস্ত্র বহন, আতশবাজি, পটকা ফুটানো, বিস্ফোরক দ্রব্য বহন, সংরক্ষণ, ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবহার এবং অনুমতি ব্যতীত ড্রোন উড্ডয়ন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মো. আনিসুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। ঢাকা হেড কোয়ার্টারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আগে থেকে সোচ্চার রয়েছে পুলিশ।
মাহফুজা ২৮-১