৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৬ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

    সর্বশেষ খবর

    মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো ধর্মের নামে বিভ্রান্তি দূর করতে সহায়তা করবে- প্রধানমন্ত্রী

    মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো ধর্মের নামে বিভ্রান্তি দূর করতে সহায়তা করবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে জনগণ ইসলামী মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান লাভ করবে বলেও মনে করেন তিনি।

    সোমবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সারা দেশে ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এর আগে ২০২১ সালের ১০ জুন প্রথম ধাপে সারা দেশে ৫৬৪টির মধ্যে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছি। কারণ, এতে ইসলামের নামে কেউ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না এবং তাদের মধ্যে ইসলামী মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি হবে।’

    তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সব সময়ই ইসলামের খেদমত করে। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা বিশ্বের, বিশেষ করে আরব বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন। ১৯৭৪ সালে তার নেতৃত্বে ওআইসির সদস্য হয় বাংলাদেশ। ইসলামের খেদমত করার জন্য, যেটা এখন রেসকোর্স মাঠ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, যেখানে আগে রেস খেলা হতো, সেই রেস খেলা তিনি বন্ধ করেন দেন। মাদ্রাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা, বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও ইজতেমা মাঠের জায়গা দেওয়ার পাশাপাশি জুয়া খেলা এবং মদ খাওয়া বন্ধ করেছিলেন তিনি।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, মডেল মসজিদে ইসলামী মূল্যবোধের চর্চা হবে, ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান আরও বাড়বে, ইসলামী সংস্কৃতি লালন ও বিকাশের আরও সুযোগ থাকবে এবং ইসলাম ধর্মকে আরও উন্নতভাবে পালনের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।

    তিনি বলেন, দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের মর্যাদা দিয়েছে, ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। তাছাড়া প্রতিটি উপজেলা ও জেলা সদরে একটি করে মডেল মসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে।
    তিনি এর আগে ৫০টি এবং আজকে আরও ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করতে পারায় মহান রাব্বুল আল আমিনের দরবারে শোকরিয়া আদায় করেন।

    ‘ইসলাম ধর্মের দোহাই দিয়ে কেউ যেন মানুষকে বিপথে নিতে না পারে, প্রকৃত ইসলামের মূল্যবোধ সম্পর্কে মানুষের মাঝে যেন সচেতনতার সৃষ্টি হয়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রেখেই এই মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প আমরা নেই এবং নির্বাচনী ইশতেহারেও সেটার ঘোষণা দেই,’ বলেন তিনি।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হচ্ছে—মুসল্লিদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা, ধর্মীয় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, দ্বীনি দাওয়াতি কার্যক্রমের সুবিধা সৃষ্টি করা, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এবং নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, সরকারের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার নীতি নির্ধারণের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাধীনভাবে ইসলামী জ্ঞান ও সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে ইসলামী মূল্যবোধের প্রসার ঘটানো।

    শুধু নামাজ আর মোনাজাত নয়; মসজিদগুলো হয়ে উঠছে জ্ঞান অন্বেষণ, গবেষণা, প্রশিক্ষণ আর ইসলামী সংস্কৃতিচর্চার পীঠস্থান। দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠছে এসব মডেল মসজিদ।এখানে একটি লাইব্রেরিও থাকবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদগুলোতে ওজু ও নামাজের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে। এছাড়া, হাজিদের জন্য রেজিস্ট্রেশন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, দাফনের আগের আচার পালন, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, ইসলামী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সম্মেলন কক্ষও থাকবে। ইসলামিক দাওয়াত, ইসলামী বই বিক্রয় কেন্দ্র, দেশি-বিদেশি অতিথিদের জন্য বোর্ডিং সুবিধাও এখানে থাকছে।

    সরকার প্রধান  এ সময় সূরা তওবার ১৮ নম্বর আয়াতের বাংলা তরজমা উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, আমাদের এই ধর্ম নিয়ে কেউ যেন আর কোনো রকম বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে না পারে। আমাদের আলেম ওলামাগণ হচ্ছে ‘ওরাসাতুল আম্বিয়া’। মানুষ মসজিদের ইমাম, খাদিম এবং আলেম-ওলামাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে দেখে। আমাদের সমাজে যেসব অসঙ্গতি রয়েছে— বাল্যবিবাহ, মাদকাসক্তি, নারীর প্রতি সহিংসতা, গৃহকর্মী ও অধীনস্থদের নির্যাতন, খাদ্যে ভেজাল এবং দুর্নীতি ইত্যাদি দূরীকরণে ইমাম ও খতিব সাহেবগণকে আমার অনুরোধ থাকবে, আপনারা যখন মসজিদে কোনো বয়ান দেন বা জুম্মার নামাজে খুতবা পড়েন, সে সময় উপরোক্ত বিষয়গুলো থেকে মানুষ যাতে বিরত থাকে, সে বিষয়গুলো আপনারা মানুষের সামনে তুলে ধরবেন। এর বিপরীতে সঠিক মানবিক গুণগুলো যাতে উঠে আসে, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন।

    সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদক এগুলো আমাদের সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ থেকে যেন প্রত্যেকের ছেলে-মেয়ে বিরত থাকে। এটা যে ইসলাম ধর্মের প্রতি কোনো সম্মান নয়, বরং ইসলামের বদনাম হয়, সেই বিষয়টার দিকে সকলে যাতে সচেতন হয়। নিজেদের সন্তানের দিকে নিজেরা যেমন, তেমনই শিক্ষকরাও তাদের শিক্ষার্থীদের প্রতি লক্ষ রাখবেন। আপনাদের ছেলে-মেয়ে কোথায় যায় এবং কার সঙ্গে মেশে, জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসের সঙ্গে যেন কোনোভাবে সম্পৃক্ত না হয়। এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রেও আপনারা অবদান রাখতে পারেন।

    কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম, রাজশাহী ও শরীয়তপুর থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, সরকারি কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ। অনুষ্ঠানে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ওপর একটি ভিডিও-ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

    মাহফুজা ১৬-১

     

    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    আলোচিত খবর