আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর দেশে প্রথমবারের মতো মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের এমআরটি-৬ লাইনের দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন এবং প্রথম যাত্রী হবেন। তবে সাধারণ যাত্রীরা স্বপ্নের মেট্রোরেলে চড়ার সুযোগ পাবে পরদিন ২৯ ডিসেম্বর থেকে।
১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পথের আধুনিক ট্রেনে সবগুলো কোচই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। শুরুর দিকে পুরাপুরি অপারেশনে যাচ্ছে না মহানগরীর নতুন এ গণপরিবহন। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানিয়েছে, সেখানে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ চার ঘণ্টা চালানো হবে।
এদিকে উদ্বোধনের আগে সবগুলো মেট্রো স্টেশন সার্বিক প্রস্তুতি মোটামুটি শেষ হয়েছে। বিশেষ করে আগারগাঁও উত্তরা দিয়াবাড়ী স্টেশন বেশ পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে। বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর নিজের প্রথম যাত্রী হয়ে যাবেন উত্তরা দিয়াবাড়ি স্টেশনে।
প্রাথমিক পর্যায়ে মোট ১১ দশমিক ২৯ কিলোমিটার অংশ বুধবার উদ্বোধন করা হচ্ছে। শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। কর্তৃপক্ষ জানায়, পৌনে ১২ কিলোমিটার এই পথ পাড়ি দিতে মেট্রোরেলের সময় লাগবে ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ড। উদ্বোধনের পর দুই থেকে তিন মাস কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে ট্রেনগুলো। প্রথম দিকে সকাল এবং বিকেলে কিছুক্ষণ ট্রেন চলবে। সব মিলিয়ে দিনে চলবে পাঁচটি ট্রেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এন এ সিদ্দিক জানান, মেট্রোরেল চালু করার সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বাড়তি চাকচিক্য না থাকলেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান খুব ভালোভাবে করার জন্য চেষ্টা থাকবে। নিরাপত্তা ও নানা আনুষ্ঠানিকতার কারণে উদ্বোধনের দিন জনসাধারণের মেট্রোরেলে চড়ার সুযোগ রাখা হচ্ছে না। সাধারণ মানুষ পরদিন মেট্রোরেলে উঠতে পারবেন।
ডিএমটিসিএল সংশ্লিষ্টরা জানান, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথে ৯টি স্টেশন রয়েছে। স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে উত্তরা উত্তর (দিয়াবাড়ী), উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও। উদ্বোধনী দিনে শুরু ও শেষের স্টেশন খুলে দেওয়া হবে। স্টেশনে লিফট, এস্কেলেটর ও সিঁড়ি দিয়ে ওঠা যাবে। তিনতলা স্টেশন ভবনের দ্বিতীয় তলায় টিকিট কাউন্টার। তিন তলায় প্ল্যাটফরম। শুধু টিকিটধারী ব্যক্তিরা ওই তলায় যেতে পারবেন। মেট্রোরেলের প্রতিটি ট্রেনে থাকবে ছয়টি কোচ। এতে ৫৪ জন বসতে পারবেন। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবেন ৩০৬ জন। ২০১২ সালে মেট্রোরেল প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২০১৭ সালে মূল কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে।
মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে দুই দিকে থাকছে দুটি করে চারটি ফটক; এর প্রতিটিতে দুজন করে মোট আটজন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের তদারকে থাকবেন একজন কর্মকর্তা। তুরাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদার বলেন, প্রতিটি স্টেশনে নয়জন পুলিশ সদস্য থাকবেন। তবে আগারগাঁও ও উত্তরা স্টেশনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা আরও বেশি হবে।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, উদ্বোধনের দিন পুলিশ ছাড়াও র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সদস্যরা থাকবেন। বৃহস্পতিবার থেকে স্বাভাবিকভাবে যাত্রী নিয়ে মেট্রোরেল চলাচল করবে। তখন পুলিশ এবং কিছু আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবে।
এমআরটি-৬ লাইনের জন্য ২৪ সেট ট্রেন কেনা হচ্ছে জাপান থেকে। এরই মধ্যে ১৯টি ট্রেন এসেছে। ১৯ ধরনের পরীক্ষা চলছে সেগুলোর। পারফরম্যান্স টেস্ট, ট্রায়াল রান ও ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট শেষ হওয়া ১০টি ট্রেন চলবে দিয়াবাড়ী-আগারগাঁও অংশে। আর দুটি রিজার্ভ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে শুরুতে পাঁচটি ট্রেন চলবে।
কোম্পানি সূত্র জানায়, মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ৬০ টাকা। সাপ্তাহিক, মাসিক, পারিবারিক টিকিট আগে থেকে কেনা যাবে। স্মার্ট কার্ডে ভাড়া পরিশোধ করলে ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে।
উদ্বোধনী দিনে মেট্রোরেল চালাবেন মরিয়ম আফিজা।
মাহফুজা ২৭-১২