২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৪শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

    সর্বশেষ খবর

    বিএনপি রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেছে

    বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেছে ।‘পর পর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।  নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন ও ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনসহ ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করে দলটি।

    সোমবার  বিকালে রাজধানীর হোটেল দ্য ওয়েস্টিনে এই উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে দলের পক্ষ থেকে তা প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে রূপরেখার সংক্ষিপ্ত লন্ডন থেকে পড়ে শোনান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিস্তারিত পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

    অনুষ্ঠানে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতা, বিশিষ্ট নাগরিক, গণমাধ্যমের সম্পাদক, সাংবাদিক, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাসহ অনেকে অংশ নেন।

    বিএনপির ২৭ দফা রূপরেখায় যা আছে

    ১. একটি ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ গঠন করে বর্তমান অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক গৃহীত সব অযৌক্তিক, বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক সাংবিধানিক সংশোধনী ও পরিবর্তনসমূহ রহিত/সংশোধন করা হবে।

    ২. প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক `Rainbow-Nation’ প্রতিষ্ঠা করা হবে।

    ৩. একটি ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে।

    1. রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়ন করা হবে।

    ৫. পরপর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।

    ৬. বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে ‘উচ্চকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা’ প্রবর্তন করা হবে।

    ৭. সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতামত প্রদানের সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।

    ৮. বর্তমান ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ সংশোধন করা হবে।

    ৯. সকল রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করা হবে। শুনানির মাধ্যমে সংসদীয় কমিটির ভেটিং সাপেক্ষে এই সকল প্রতিষ্ঠানের সাংবিধানিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে নিয়োগ প্রদান করা হবে।

    ১০. বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। বর্তমান বিচারব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি ‘জুডিসিয়াল কমিশন’ গঠন করা হবে।

    ১১. একটি ‘প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করে প্রশাসন পুনর্গঠন করা হবে।

    ১২. মিডিয়ার সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি ‘মিডিয়া কমিশন’ গঠন করা হবে।

    ১৩. দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোনো আপস করা হবে না। অর্থপাচার ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে। সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল’ নিয়োগ করা হবে।

    ১৪. সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে।

    ১৫. বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে একটি ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হবে।

    ১৬. ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ এই মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ভোগ করবেন।

    ১৭. মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা হবে।

    ১৮. বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল করা হবে।

    ১৯. বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হবে। বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডের মধ্যে কোনো প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতা বরদাশত করা হবে না এবং কোনো সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা আশ্রয়-প্রশ্রয় পাবে না। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

    ২০. দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলা হবে।

    ২১. ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর স্বাধীন, শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান করা হবে।

    ২২. রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি তালিকা প্রণয়ন করা হবে এবং তাদের যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদান করা হবে।

    ২৩. যুবসমাজের ভিশন, চিন্তা ও আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে আধুনিক ও যুগোপযোগী যুব-উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এক বছরব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত, যেটাই আগে হবে, শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান করা হবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি বিবেচনা করা হবে।

    ২৪. নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। জাতীয় সংসদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে নারীদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।

    ২৫. চাহিদাভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

    ২৬. ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ এই নীতির ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের ‘NHS’ এর আদলে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তন করা হবে।

    ২৭. কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হবে।

    পরবর্তীতে যথাসময়ে অন্যান্য বিষয়ভিত্তিক সংস্কার প্রস্তাব ও উন্নয়ন কর্মসূচি প্রকাশ করা হবে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়।

    এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, নিতাই রায় চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য

    আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, আবদুল হাই শিকদার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

    সমমনা দলের নেতাদের মধ্যে ছিলেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কল্যাণ পার্টি চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাগপার একাংশের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফুর রহমান, ডিএল সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের চেয়ারম্যান ড. মহিউদ্দিন ইকরাম, ইসলামী ঐক্যজোট সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল করিম, লেবার পার্টি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ।

    এছাড়াও গণফোরামের আবু সাঈদ, সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকী, ভাষানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব রফিকুল ইসলাম  উপস্থিত ছিলেন।

    বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের এই রূপরেখা অধিকতর সমৃদ্ধ করতে গঠনমূলক পরামর্শ জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে সাদরে গ্রহণ করবে বিএনপি।

    মাহফুজা ১৯-১২

     

    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    আলোচিত খবর