অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সামুদ্রিক সম্পদ ও সামুদ্রিক বাণিজ্য রক্ষায় সমুদ্রে নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে সরকারবলে জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
বুধবার‘ফ্রেন্ডশিপ বিয়ন্ড দ্য হরাইজন’ শিরোনামে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আয়োজিত কক্সবাজারের ইনানীতে বীচে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউ-২০২২-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন তিনি।
দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, সৌদি আরব, ভারত, চীন, কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, নেদারল্যান্ডস এবং স্বাগতিক বাংলাদেশসহ ২৮টি দেশের নৌবাহিনী ও মেরিটাইম সংস্থার অংশগ্রহণে চার দিনব্যাপী আইএফআর শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ফ্লিট রিভিউয়ের আয়োজন করে।
তিনি বলেন, ‘সমৃদ্ধ অর্থনীতি কেবল তখনই সম্ভব, যখন আমরা সমুদ্রে একটি নিরাপদ এবং সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারব। সেই লক্ষ্যে আমরা আমাদের সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় পরিকল্পিত সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গুণগত উন্নয়নমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের নৌবাহিনীর আধুনিকায়ন করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবাধ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিশ্চিত করার জন্য নিরাপদ সমুদ্র অপরিহার্য। কারণ বর্তমানে বিশ্বের ৯০ শতাংশ বাণিজ্য সমুদ্রপথ দিয়ে হয়।’
তিনি বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক ভৌগোলিক সীমানার মাধ্যমে আমাদের সব দেশ বিভক্ত হলেও বন্ধুত্বের সেতু বন্ধনে সমুদ্র উপকূলীয় সব দেশের সঙ্গে আমরা একই সূত্রে গাঁথা। ‘ফ্রেন্ডশিপ বিয়ন্ড দ্য হরাইজন’ এই উপজীব্যকে ধারণ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আয়োজিত ‘আইএফআর-২০২২’ ইভেন্টটি আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে সক্ষম হবে। যা সকল সামুদ্রিক দেশসমূহের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বাড়াতে এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’’
সংঘাত নয়, সমঝোতা এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যেকোনও সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী । শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করা হচ্ছে যুদ্ধ করার জন্য নয়। আমাদের লক্ষ্য শান্তি স্থাপন এবং শান্তি বজায় রাখা।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘যেকোনো যুদ্ধ যে মানবজাতির জন্য কী ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তা আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি সংঘাত নয়, সমঝোতা এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
তিনি বলেন, আমি অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, যাদের নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতা আজকের আইএফআর সম্মেলনকে এতো বর্ণিল ও মনোমুগ্ধকর করেছে। আমি বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য।
বিদেশি অতিথি যারা অংশ নিয়েছেন, আপনাদের বাংলাদেশে অবস্থান আনন্দদায়ক এবং সুখময় হোক- এই কামনা করছি।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বিদেশি জাহাজের ক্রুদের বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ, সিল কমান্ডোদের মহাকাশ থেকে ফ্রি-ফল জাম্প, নানা কসরৎ এবং বহরের অপারেশনাল প্রদর্শনী উপভোগ করেন।
তিনি ‘বঙ্গবন্ধু ও নৌবাহিনীর ৫০ বছরে যাত্রা’ শিরোনামের একটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন। এছাড়াও সমুদ্র সৈকতে নৌবাহিনীর একটি জেটি উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল।
অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অগ্রযাত্রার ওপর আলোকপাত করে একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা প্রদর্শিত হয়।
এ সময় কূটনৈতিক মিশনের সদস্যরা; সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা, অংশগ্রহণকারী নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড প্রধানরা, প্রতিনিধিরা, অন্যান্য সামরিক ও অসামরিক সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মাহফুজা ৭-১২