বোলিং ডিপার্টমেন্টের দুর্দান্ত পারফম্যান্সে ভারত গুটিয়ে যায় ১৮৬ রানেই। জবাব দিতে নেমে ৩৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ৪ উইকেটে ১২৭। অর্থাৎ ১৬ ওভারে ৬ উইকেটে দরকার ছিল ৬০ রান। উইকেটে ছিলেন মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ। ব্যাটিংয়ের অপেক্ষায় ছিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব, মেহেদি হাসান মিরাজের মতো ব্যাটার। জয়ের জন্য এর চেয়ে সহজ সমীকরণ আর কি-ই বা হতে পারে!
কিন্তু এরপর মাত্র ৮ রানের ব্যবধানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে হারের একদম কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছেছিল বাংলাদেশ। ১৩৬ রানের মাথায় নবম উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। হারটা মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। মেহেদি হাসান মিরাজের অবিশ্বাস্য প্রতিরোধে সেখান থেকে ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ।
রোববার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৮৬ রানের জবাব দিতে নেমে প্রথম বলেই নাজমুল হোসেন শান্তকে হারায় বাংলাদেশ। বাইরের বল অযথাই খোঁচা দিতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন শান্ত। তারপর রানের চিন্তা বাদ দিয়ে উইকেট আকড়ে পরে থাকতে চেয়েছেন অপর ওপেনার লিটন দাস ও তিনে নামা এনামুল হক বিজয়।
৫৪ বলে দ্বিতীয় উইকেটে ২৬ রান তোলেন দুজন। এনামুল ২৯ বলে ১৪ রান করে ফেরেন। এরপর সাকিব আল হাসান ও অধিনায়ক লিটন টানছিলেন দলকে। দুজন ইনিংসের শুরুতে সময় নিলেও সেট হওয়ার পর বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই রান তুলছিলেন। কিন্তু দু’জনের কেউই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি।
৬৩ বলে ৪১ রান করা লিটন আউট হয়েছেন ভুল শট খেলে। বিরাট কোহলির দুর্দান্ত এক ক্যাচ হওয়া সাকিব ফিরেছেন ৩৮ বলে ২৯ রান কর। এই দুজন ফেরার পর বড় দায়িত্ব ছিল দুই অভিজ্ঞ মুশফিুকর রহিম ও মাহমুদউল্লাহর কাঁধে। দুজনের কেউই দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।
উইকেটে সেট হতে দুজন অনেক সময় নিয়েছেন। সেট হওয়ার পর যখন রান করার দাবি ছিল তখনই পরপর দুই বলে ফিরেছেন দুজন। মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন ধ্রুব, ইবাদত হোসেন ও হাসান মাহমুদ এই পাঁচ জন ফিরেছেন মাত্র ৮ রানের ব্যবধানে।
৯ম উইকেট পড়ে ১৩৬ রানের মাথায়। প্রয়োজন তখনও ৫১ রান। উইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজ, সঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমান। মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে শেষ উইকেট জুটিতে ৫১ রানের জুটি গড়েন মিরাজ। তাতে মিরাজ ৩০ বলে একাই করেছেন ৩৭ রান। ৩৯ বলে শেষ পর্যন্ত ৩৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন আট নম্বরে ব্যাট করতে নামা মিরাজ। ৪৬ ওভারে নয় উইকেট হারিয়ে জয়ের জন্য ১৮৭ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজ করলেন বিস্ময়কর ব্যাটিং। মোস্তাফিজুর রহমানকে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে রেখে সিঙ্গেল না নিয়ে তিনি বাংলাদেশকে জয়ী করে মাঠ ছাড়ার পণ করেন ।
সেই সঙ্গে ইতিহাসের সেরা একটি ম্যাচ জয় করে নিলো বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে ১ উইকেটের এই অবিস্মরনীয় জয়টি লেখা হয়ে যাবে ইতিহাসের পাতায়।
এদিকে বাহাতি স্পিনার ১১তম ওভারে জোড়া আঘাতে বিদায় করেন রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলিকে। তাতে করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে চতুর্থবার এক ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়লেন সাকিব।
এই ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডেতে লিটন যুগে নাম লেখাচ্ছে স্বাগতিক দল। নিয়মিত অধিয়ানয়ক ইনজুরিতে ছিটকে যাওয়ায় এই সিরিজে নেতৃত্বের ভার লিটনের কাঁধে।
ভারতের মতো দলের বিপক্ষে নেতৃত্ব, বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের বিপক্ষে নেতৃত্ব দেওয়া নিশ্চয় বড় কিছু, দারুণ কিছু। লিটনের চোখও জয়ের দিকেই। ভারত বলে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাননি লিটন বা নিজেদের আন্ডারডগ বলেও মন্তব্য করেননি। ঘরের মাঠে জয়ের নেশায় বিভোর লিটন জানিয়ে দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা।লিটন বলেন , ‘লক্ষ্য একটাই। জেতার জন্যই খেলতে নামব। ওদের সাথে লড়াই করা পুরোপুরি সম্ভবএবং আমাদের তিন বিভাগই ভালো আছে।’
তামিম ছাড়াও ইনজুরিতে তাসকিন আহমেদ। দলের সেরা ওপেনারের সঙ্গে প্রধান পেসার তাসকিনের ইনজুরি স্বাগতিক শিবিরের জন্য একটু অস্বস্তিকর বটে। ভারতও হারিয়েছে প্রধান পেসার মোহাম্মদ শামিকে। বদলি হিসেবে স্কোয়াডে যুক্ত হলে নতুন পেস সেনসেশন উমরান মালিক।
মাহফুজা ৪-১২