উরুগুয়েকে ২-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপের নকআউট রাউন্ডে পা রাখলো ২০১৬ ইউরো চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল। এইচ গ্রুপ থেকে নকআউট পর্বে যাওয়া পর্তুগীজদের হয়ে দুটো গোলই করেছেন ব্রুনো ফার্নান্দেজ।
প্রথমার্ধ ছিল ম্যাড়ম্যাড়ে। একদল আক্রমণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আরেক দল শুধু রুখেই যাচ্ছে। জয় হলো এই শুরুতে আক্রমণ করে যাওয়া দলেরই। লুসাইলে সোমবার রাতে দুই গোল দিয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন কাতারে দারুণ খেলা ব্রুনো। ১৯৬৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আর কেউ পারেনি ব্রুনোর মতো। যে কোনো বিশ্বকাপে জোড়া গোলের সঙ্গে জোড়া অ্যাসিস্ট ৬৬ বিশ্বকাপ থেকে পর্তুগালের জার্সি গায়ে কেউ করতে পারেনি।
২০১৮ বিশ্বকাপে পর্তুগালের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে জয়ের সুখস্মৃতি নিয়ে খেলতে নামে উরুগুয়ে। ২০১৬ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নদের বল দখলের লড়াইয়ে একদমই পিছিয়ে ছিল তারা। ম্যাচের প্রথম সুযোগটি পায় পর্তুগাল ৪ মিনিটে। ডি-বক্সের ভেতর রোনালদোর পাস থেকে ভলি করতে গিয়ে বল গোলবারের অনেক উপর দিয়ে মারেন কার্ভালহো।
৬৯% বল নিজেদের দখলে নিয়েও ম্যাচের পুরো প্রথমার্ধে একটি শটও গোলমুখে নিতে পারেনি পর্তুগাল। অন্যদিকে শক্তিশালী রক্ষণভাগ বেশ পর্তুগিজ আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের বেশ ভুগিয়েছে। ৩২ মিনিটে ম্যাচের সবচেয়ে আলোচিত এবং গোলের সবচেয়ে সহজ সুযোগটি মিস করেন বেনতানচুর। মাঝমাঠ থেকেই বল টেনে নিয়ে ডিবক্সের ভেতর ঢুকে গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হন তিনি। এমন সুযোগ নষ্ট করে মাঠেই নিজের উপর রাগ ঝাড়েন এই টটেনহ্যাম মিডফিল্ডার। প্রথম ৪৫ মিনিটে আর তেমন গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি দুই দলের কেউ
বিরতি থেকে ফিরে আক্রমণ বাড়ায় দুই দল৷ ৫৫ মিনিটেই গোলের দেখা পায় পর্তুগাল। বাম পাশ ব্রুনো ফার্নান্দেজের ক্রসে রোনালদো মাথা ছোঁয়ানোর চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন, ফলে বল সোজা খুঁজে পায় জালের ঠিকানা। প্রথমে এটিকে রোনালদোর গোল বলা হলেও পরে অধিকতর পরীক্ষার পর গোলটি ব্রুনো ফার্নান্দেজের নামে দেওয়া হয়
গোল খেয়েই যেন নিজেদের খুঁজে পেতে চেষ্টা করে উরুগুয়ে৷ ৫৯ মিনিটে ভারেলার বাড়ানো ক্রসে কাভানি ভলি করলেও তা ছিল লক্ষ্যভ্রষ্ট। ৭৬ মিনিটে আবারো এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় উরুগুয়ে। তবে এবার তাদের জন্য বাধা হয়ে আসে গোলবার। ম্যাক্সি গোমেজের বুলেট গতির শট গোলবারে লেগে প্রতিহত হয়।
পর্তুগাল যখন ১-০ গোলের ব্যবধানে ম্যাচ জয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখনকি তাদেরকে পেনাল্টি উপহার দেন উরুগুয়ের ডিফেন্ডার হিমেনেজ৷ ডি বক্সের ভেতর তার হাতে বল লাগলে রেফারি ভিএআর এর সহায়তায় পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন। স্পট কিক থেকে গোল করে পর্তুগালকে দ্বিতীয় রাউন্ডে তুললেন এই ম্যান ইউ তারকা। বিশ্বকাপে ২ গোলের পাশপাশি তার ঝুলিতে রয়েছে ২ এসিস্টও।
শুরুর দিকে বেশি রক্ষণাত্মক ছিল উরুগুয়ে। বেন্টাকুর বল পেয়েই ডি বক্সে ড্রিবলিং করে ঢুকে যান। বাঁধা হয়ে দাঁড়ান পর্তুগীজ গোলরক্ষক। এগিয়ে এসে শট রুখে দিয়ে বল নিয়ে নেন নিজের নিয়ন্ত্রণে। অন্যদিকে বারবার আক্রমণের চেষ্টা করে গেলেও উরুগুয়ের রক্ষণভেদ করতে পারেনি পর্তুগীজরা। ৮টি আক্রমণ করে, সবগুলোই ছিল লক্ষ্যহীন। প্রথমার্ধে ৭০শতাংশ বল ছিল পর্তুগালের পায়ে। উরুগুয়ে যেখানে ১০টি ফাউল করে সেখানে পর্তুগাল করে মাত্র ২টি।
দ্বিতীয়ার্ধ ছিল তার বিপরীত। পুরো ম্যাচে পর্তুগালের ১৮ শটের বিপরীতে উরুগুয়ে ১৪টি নেয়। প্রত্যেকেরই তিনটি করে অন টার্গেট শট। ২ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে সবার আগে এই গ্রুপ থেকে নকআউটে পর্তুগাল। ঘানার বিপক্ষে জিতলেই যেতে পারবে উরুগুয়ে। আর যদি দক্ষিণ কোরিয়া পর্তুগালের বিপক্ষে জিতে যায় আর উরুগুয়ে-ঘানা ম্যাচ ড্র হয় তাহলে তিন দলই দৌড়ে থাকবে শেষ ষোলোতে যাওয়ার।
মাহফুজা ২৯-১১