টেলিভিশনের একটি আলোচনার অনুষ্ঠানে ‘নেতিবাচক, ভ্রান্ত ও ক্ষতিকর’ ধারণা এবং শব্দ ব্যবহারের অভিযোগে দায়ের করা রিভিশন মামলায় আদালত অভিনেতা আফরান নিশো, অভিনেত্রী মেহজাবিন চৌধুরীসহ ছয় জনকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন । আগামী ২৫ এপ্রিল আসামিদের সমনের বিষয়ে জবাব দাখিলের দিন ধার্য করা হয়েছে।
বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আছাদুজ্জামানের আদালতে রিভিশন দায়ের করেন কান্ট্রিওয়াইড হেলথ ইনিশিয়েটিভ ফর লার্নিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের পক্ষে নাবিলা আক্তার ও আরিয়া কবির। শুনানি শেষে আসামিদের আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন আদালত।
রিভিশন মামলার অপর আসামিরা হলেন- প্রযোজক ও স্বত্বাধিকারী, সিএমভি র এস কে শাহেদ, নির্মাতা রুবেল হাসান, নাটক লেখক মাইনুল শানু ও চ্যানেল আই ফাউন্ডার ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফরিদুর রেজা সাগর।
বাদী পক্ষের আইনজীবী আল মামুন রাসেল রিভিসন দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন দায়ের করি এবং আদালত রিভিশনটি গ্রহণ করে আসামিদের হাজির হওয়ার জন্য সমন জারির আদেশ দেন।
একই ঘটনায় গেল ফেব্রুয়ারিতে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন -পিবিআইএই দুই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে । প্রতিবেদনে তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয় এবং পরবর্তীতে বাদীরা নারাজি দাখিল করলে তা নামঞ্জুর করেন আদালত।
গেল বছর ১১ আগস্ট বশির আল হোসাইন নামের এক প্রতিবন্ধী অধিকার কর্মী মামলা দুটি দায়ের করেন।
একটি মামলা দায়ের করা হয় ‘ঘটনা সত্য’ নামের একটি নাটক নিয়ে, যা চ্যানেল আইয়ের ঈদুল আজহার আয়োজনে গেল বছর ২৩ জুলাই প্রচার করা হয়। এ মামলায় আসামি করা হয়-চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, নাটকের চিত্রনাট্যকার মঈনুল সানু, পরিচালক রুবেল হাসান, অভিনেতা আফরান নিশো, অভিনেত্রী মেহজাবিন চৌধুরীকে। তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই‘র পুলিশ পরিদর্শক নূরুননবী সরকার এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে গত ২ মার্চ প্রতিবেদন দাখিল করেন ।
অপর মামলা করা হয় চ্যানেল আইয়ের আলোচনা অনুষ্ঠান ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর ১১ জুলাইয়ের পর্ব নিয়ে, যেখানে একজন আলোচকের কথায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে ‘নেতিবাচক ধারণা’র প্রকাশ ঘটেছে বলে অভিযোগ করা হয় । এ মামলায় আসামি করা হয়- চ্যানেল আই’র ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ, অনুষ্ঠান পরিকল্পনাকারী জাহিদ নেওয়াজ খান, প্রযোজক রাজু আলিম, উপস্থাপক সোমা ইসলাম এবং আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকা ব্যারিস্টার সায়েদুল হককে। তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই‘র পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম।তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেন ।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আল মামুন রাসেল বলেন, ‘আমরা শুনানিতে মহানগর দায়রা জজ আদালতকে বলেছি, ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর আদেশে বলেছেন নাটকের ডায়ালগে সরাসরি প্রতিবন্ধীদের হেয় করার কোনো বক্তব্য নেই। অথচ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এর ৩৭ ধারায় বলা আছে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে নেতিবাচক ও ভ্রান্ত ধারণা দিলেই এ অপরাধ হবে। যা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত উপেক্ষা করেছেন এবং তদন্ত কর্মকর্তা নিজেই স্বীকার করেছে বিবাদীরা কাজটি করেছেন, কিন্তু নাটক তৈরির সময় ধারণা ছিল না এটা অপরাধ হবে এবং ফেসবুকে ক্ষমাও চেয়েছেন। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, অপরাধ প্রমাণিত কিন্তু আইনে অজ্ঞতা কখনো অজুহাত হিসেবে গণ্য হয় না এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষমা চাইলে তা আইনের শাস্তি থেকে বাঁচার সুযোগ নেই। আদালত রিভিশন মামলাটি গ্রহণ করে আসামিদের আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন। আগামী বছরের ২৫ এপ্রিল সমনের জবাব দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেছেন। আমরা আদালতের আদেশে সন্তুষ্ট।
মাহফুজা ১৬-১১