১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

    সর্বশেষ খবর

    স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন সুনামগঞ্জ ও সিলেট

    ডেস্ক রিপোর্ট : টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে দেশের কয়েকটি জেলার   বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ,কুড়িগ্রাম, শেরপুর ও  নেত্রকোনা জেলার অবস্থা ভয়াবহ। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক তলিয়ে গেছে। অনেক স্থানে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও বৈদ্যুতিক খুঁটি তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।  জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট জানুন বিস্তারিত

    সিলেটের বন্যা পরিস্তিতি :মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢল আর সিলেট অঞ্চলের ভারী বর্ষনে প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন অঞ্চল। সুরমার কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০৫ সেন্টিমিটার,সিলেট পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।কুশিয়ারা,সারি ও পিয়াইন নদীর পানিও বিপৎসীমার উপরে। জেলার গোয়াইনঘাট,কোম্পানীগঞ্জ,কানাইঘাট,জৈন্তাপুর ও সদর উপজেলার ১০ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দী। অনেকটাই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় এলাকাগুলো। সিলেট মহানগরীতেও গতকালের তুলনায় নতুন নতুন এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। অন্তত ৫০টি এলাকার লক্ষাধিক মানুষ পানিতে বন্দী। ফায়ারসার্ভিস, থানা,বিদ্যুতকেন্দ্র সহ জরুরী পরিষেবা কেন্দ্রেও বন্যার পানি ভক্সপপ ৩ জন। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে,আগামী কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাত থাকবে,তাই সহসাই উন্নতি হচ্ছে না বন্যা পরিস্থিতির। সট: এ কে এম নিলয় পাশা উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী,সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড এদিকে বন্যার কারনে জেলা ও মহানগরীতে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে প্রায় ১৩০ টি। ব্যবস্থা করা হচ্ছে খাবারের।

    সুনামগঞ্জের বন্যা : স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সুনামগঞ্জ। মাত্র ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে ভারী বষর্ণ ও উজানের ঢলে সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুরসহ আশপাশের এলাকা পানির নিচে চলে গেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই পাহাড়ী ঢলে গোবিন্দগঞ্জ মুল এলাকায় পানি বেড়ে যায়। পরে রাত ১০টার দিকে পানির গতি বেশি হওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে সড়কে। ছাতক ও সুনামগঞ্জ শহরের অসংখ্য বাড়ি-ঘর হাটু পানিতে তলিয়ে আছে।

    সুনামগঞ্জে  বন্যাকবলিতদের রক্ষায় মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। দুপুরে সিলেট সেনানিবাস থেকে সেনাবহিনীর ৭টি ব্যাটেলিয়ন সুনামগঞ্জের উদ্যোশে যাত্রা করে। এসময়, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল হামিদুল হক।

    কুড়িগ্রামের বন্যা : উজানের পাহাড়ী ঢলের পানি কমতে থাকায় আকষ্মিক সৃষ্ট কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজিবপুরের বন্যা পরিস্থতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। তবে বন্যার্তদের দুর্ভোগ এখনও কমেনি।অনেক এলাকায় কাঁচা-পাকা সড়ক এখনও নিমজ্জিত থাকায় যোগাযোগ সমস্যায় রয়েছে এসব বন্যার্তরা। ৩৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি থাকায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। প্রায় ৬শ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে এখনও তলিয়ে রয়েছে। কবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সংকট।

    এদিকে,উজানের পানি আর টানা বর্ষণে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি দ্রুত বাড়তে থাকায় চরাঞ্চলের বেশ কিছু নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি পয়েন্টে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে।

    শুক্রবার সকালে স্থানীয় পাউবো জানায়,সবকটি নদনদীর পানি বাড়ছে তবে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার সামান্য ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

    অন্যদিকে,বন্যার্তরা ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করলেও সরকারিভাবে দেয়া জিআরের ৩লাখ টাকা দিয়ে কেনা শুকনো এক হাজার প্যাকেট খাবার বৃহস্পতিবার থেকে বিতরণ শুরু হয়েছে বলে জানায় স্থানীয় প্রশাসন।

    শেরপুরের বন্যা : ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে দ্বিতীয় দফায় শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর ইউনিয়নের পূর্ব অঞ্চলের তিনটি গ্রামের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অর্ধশত পুকুরের চাষকৃত মাছ ভেসে গেছে বন্যার পানিতে। একাধিক মুরগি খামারের ক্ষতি হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সহায়তা প্রদানের আশ^াস দিয়েছেন জেলা প্রশাসন।

    উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশী নদীর পূর্ব পাড়ের বাঁধ ভেঙ্গে ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের বনকালি, দীঘিরপাড় ও ভাটপাড়া এই তিনটি গ্রামের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের বেশ কিছু বাড়ি ঘরও পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থায়ীভাবে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিনটি পাহাড়ী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

    এদিকে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষদের দ্রুত সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়ে বাঁধ পুনঃনির্মাণে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক

    রংপুরের বন্যা :টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে । গঙ্গাচড়া উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী ও দুর্গম চরে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৩০টি গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন।

    এদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে গঙ্গাচড়া উপজেলায় নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫টি বাড়ি ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজারসহ শত শত ঘরবাড়ি। পানি উন্নয়ন বোর্ড দুর্গম চরাঞ্চলের লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য মাইকিং করছে ।

    গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের পশ্চিম বাগেরহাট এলাকায় কয়েকশ বাড়িঘর ডুবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাস্তাঘাট ও জমির ফসল। দুর্ভোগে পড়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ।

    গত বুধবার থেকে তিস্তা নদীর পানি গঙ্গাচড়া পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এতে উপজলার ছয়টি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম দুই থেকে তিন ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে।

    রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, ভাঙনকবলিত কোলকন্দ ইউনিয়নের বিনবিনিয়া চর ও লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ক্ষতির মুখে। তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এসব এলাকার বাসিন্দারা সমস্যায় পড়েছেন। তাদেরকে উঁচু স্থানে যেতে বলা হয়েছে।

    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    আলোচিত খবর