১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

    সর্বশেষ খবর

    রপ্তানিকারকদের আরও উদ্যোগী হওয়ার অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর

    গার্মেন্টসে যারা কাজ করেন তাদের নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে, নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন করতে হবে বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    সকালে জাতীয় বস্ত্র দিবস উদযাপন ও ৬টি টেক্সটাইল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তিনি।

    তিনি বলেন, আমাদের বস্ত্র উৎপাদন ও বিদেশে রপ্তানির ঐতিহ্য রয়েছে। মেয়েদের কর্মসংস্থানে নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে পোশাক শিল্প। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নারীরা এসে কাজ করে। গ্রামীণ অর্থনীতিতেও তারা বিশেষ অবদান রাখছে।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী, সরকার বস্ত্রশিল্প খাতকে নিরাপদ, শক্তিশালী ও প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম করে গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

    তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বস্ত্রখাতের অবদান অপরিসীম। আমাদের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ অর্জিত হচ্ছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। জিডিপিতে এ খাতের অবদান প্রায় ১৩ শতাংশ। তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৪৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে যার ৫৩ শতাংশই নারী। পরোক্ষভাবে প্রায় ৪ কোটিরও বেশি মানুষ এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে বস্ত্রখাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

    শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য মোট রপ্তানিতে সিংহভাগ অবদান রেখে রপ্তানি আয়ে শীর্ষস্থান দখল করেছিল। আশির দশকের শেষার্ধে পাট ও পাটজাত পণ্যের আয়কে অতিক্রম করে পোশাক শিল্প রপ্তানি আয়ে প্রথম স্থানে চলে আসে।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২২ সালে বাংলাদেশের ৪৫.৭০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, যা ২০২১ সালের তুলনায় ২৭.৬৪ শতাংশ বেশি। ২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) পোশাক রপ্তানি ১৫.৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.২২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য পোশাক খাত থেকে ২০৩০ সাল নাগাদ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যমানের পণ্য রপ্তানি করা। বাংলাদেশ ২০২২ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে একটি নতুন মাইলফলক অর্জন করেছে। সরকারের পোশাক খাতে ঘোষিত বিশেষ প্রণোদনায় সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক সঙ্কটেও এ খাত এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

    সরকারপ্রধান বলেন, শ্রমিকদের জন্য কল্যাণ তহবিল গঠন, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, ন্যূনতম মজুরি কমিশন শক্তিশালী করা, শ্রম আইন সংশোধন ও শ্রম বিধিমালা জারির মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিল্প এলাকায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠন কর্মপরিবেশকে করেছে নিরাপদ। যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের হিসাব মতে শীর্ষ ১০০ গ্রিন ফ্যাক্টরির মধ্যে ৫০টিই বাংলাদেশের। লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন সার্টিফিকেশন প্রাপ্ত বাংলাদেশে এখন সবুজ কারখানার সংখ্যা এখন ১৮৭টি ।

    তিনি বলেন, বৈশ্বিক নানা কারণে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ নানা উপকরণের দাম বাড়ছে। এতে করে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। তবে, কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এসব খাতে ব্যয় সাশ্রয় করা সম্ভব। পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ সমন্বয় করতে হবে।

    বস্ত্রখাতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পরিপূর্ণ সুবিধাদি গ্রহণ এবং এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ জনবল সৃষ্টি করার জন্য আমাদের সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বস্ত্র অধিদপ্তরে দ্রুততর সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রবর্তন করা হয়েছে এবং ই-নথির মাধ্যমে বস্ত্রশিল্পের উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বলেন বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা এখন সহজে ও স্বল্প সময়ে তাদের প্রয়োজনীয় সকল সেবা নিতে পারছেন।

    শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় অর্থনীতিতে তাঁতশিল্পের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কুটির শিল্প। তাঁতিদের ব্যবহার্য উপকরণে ৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক ও সমুদয় মূল্য সংযোজন কর মওকুফ করে আমদানির সুযোগ প্রদান করা হয়েছে।

    তিনি আরও বলেন, মসলিনের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবোতে ‘ঢাকাই মসলিন হাউস’ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও পাটপণ্যের প্রসারেও আমাদের সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমরা পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছি। এখন পাট দিয়ে বিভিন্ন পণ্যের পাশাপাশি বস্ত্র নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে।

    তিনি বলেন, আমাদের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করতে হলে বিশ্ববাজারের সাথে ধারাবাহিকতা রেখে টেক্সটাইল পণ্যের বৈচিত্রকরণ ও পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ করতে হবে। একই সাথে, আমাদের বিদ্যমান পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে ‘ভ্যালু অ্যাড’ এবং দেশের রফতানি আয় বাড়াতে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান করতে । এ ব্যাপারে আমি রপ্তানিকারকদের আরও উদ্যোগী হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনারা এগিয়ে আসুন, আমাদের সরকার সব ধরনের সহায়তা দেবে।

    নতুন উদ্বোধন করা ছয়টি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট হলো- গোপালগঞ্জে শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বরিশাল গৌরনদীতে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, নওগাঁর মান্দায় শহীদ কামারুজ্জামান টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে বেগম আমিনা মনসুর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, ভোলা টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট এবং জামালপুরের মাদারগঞ্জে শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট।

    বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রউফ। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম।

    প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী তৈরি পোশাকখাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। বর্তমান সরকারের আমলে তৈরি পোশাকশিল্পের উন্নয়নের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্রও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়।

    মাহফুজা ১৪-২

     

    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    আলোচিত খবর