৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

    সর্বশেষ খবর

    ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্ক-সিরিয়ায় তিন হাজার ৮৩০ জনের প্রাণহানি; সাতদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা

    ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্ক-সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত তিন হাজার ৮৩০ জনের প্রাণহানির খবর জানা গেছে। এর মধ্যে তুরস্কেই মারা গেছেন ২ হাজার ৩৭৯ জন। দুই দেশে আহত হয়েছেন ১৭ হাজারের বেশি মানুষ। কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সিএনএন এ খবর প্রকাশ জানিয়েছে।

    ভূমিকম্পে হতাহতদের স্মরণে সাতদিনে জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। স্থানীয় সময় সোমবার  রাতে এক টুইটবার্তায় তিনি এ ঘোষণা দেন।প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান লেখেন, ‘সাতদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এসময়ে আমাদের জাতীয় পাতাকা অর্ধনমিতভাবে উত্তোলন করা হবে। আগামী রোববার সূর্যাস্ত পর্যন্ত এ শোক পালন করা হবে। দেশে ও বিদেশে তুরস্কের বিভিন্ন অফিসে হতাহতদের প্রতি শোক জানিয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতভাবে উত্তোলনের আহ্বান জানাচ্ছি।’

    খবরে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে তুরস্কে আহত হন ১৪ হাজার ৪৮৩ জন। সিরিয়ায় আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৫৩১ জন। ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকারীরা একের পর এক মরদেহ উদ্ধার করছেন। প্রাণহানির সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

    ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত দেশটিতে দুই হাজার ৩৭৯ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ১৪ হাজার ৪৮৩ জন। দেশটিতে অন্তত পাঁচ হাজার ৬০৬টি বহুতল ভবন ধসে পড়েছে।

    অন্যদিকে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত এক হাজার ৪৪৪ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া দেশটিতে সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

    এদিকে, ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় তীব্র ঠান্ডার মধ্যে বহু মানুষকে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয়েছে। আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণে অনেক মানুষকে জটলা হয়ে বসে থাকার ছবিও তুলে এনেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।

    ভূমিকম্পে তুরস্কে অন্তত ৫ হাজার ৬০৬টি ভবন ধ্বংস হয়েছে।

    সোমবার ভোর সোয়া ৪টায় তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল ও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ৪০ সেকেন্ড ধরে চলা এ ভূমিকম্পের কম্পন পৌঁছায় লেবানন ও সাইপ্রাসেও।

    ধারণা করা হচ্ছে, সোমবার ভোরে আঘাত হানা ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনগুলোতে অসংখ্য মানুষ আটকা পড়েছে। কর্মীরা ধ্বসংস্তূপের মধ্য থেকে আটকে পড়াদের উদ্ধারে তৎপরতা জোরালো করেছে। ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে তুরস্কের অন্তত ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব শহর দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। আল-জাজিরার সাংবাদিক সিনেম কোসেওগ্লু ইস্তাম্বুল থেকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

    যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, হাঙ্গেরি, সুইজারল্যান্ডের মতো দেশের পাশাপাশি বিরোধপূর্ণ পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র গ্রিসও দুর্দিনে তুরস্ককে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এরইমধ্যে তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওনা করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা।

    এছাড়া চিকিৎসক দল, ধসে পড়া ভবনের নিচে চাপা পড়া মানুষদের উদ্ধারে প্রশিক্ষিত ডগ স্কোয়াডও পাঠিয়েছে দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, সৌদি আরব, কাতারও সব ধরনের সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে।

    বিবিসি ও আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের দুটি উদ্ধারকারী দল তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওনা করেছে। এ দলে ৭০ সদস্য রয়েছেন। জার্মানির একটি বিশেষজ্ঞ উদ্ধারকারী দল তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওনা করেছে। দেশটি উদ্ধার দলের সঙ্গে বিশেষ ডগ স্কোয়াডও পাঠিয়েছে। সোমবার রাতে বন এয়ারপোর্ট থেকে এ টিম তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওনা করে।

    প্রায় একই সময়ে সুইজারল্যান্ডের একটি বিশেষজ্ঞ উদ্ধারকারী দল ও ডগ স্কোয়াড টিম জুরিখ বিমানবন্দর থেকে তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওনা করেছে। ৫০ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ উদ্ধারকারী দলকে তুরস্কে পাঠিয়েছে হাঙ্গেরি। তাদের সঙ্গেও রয়েছে একটি বিশেষ ডগ স্কোয়াড। সোমবার রাতে বুদাপেস্ট বিমানবন্দর থেকে এ উদ্ধারকারী দল তুরস্কে যাত্রা করে।

    যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন টুইটবার্তায় বাইডেন লেখেন, তুরস্কে সব ধরনের সহায়তা পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনেস্কিও সাধ্যমতো তুরস্ককে সহায়তা করার কথা জানিয়েছেন।

    মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম তাৎক্ষণিক সাড়ে ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। কাতারও তুরস্কে সহায়তা ও উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে

    যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গাজিয়ানতেপ শহরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ওই ভূমিকম্পের পর আরো অন্তত ৭৭টি আফটারশক (পরাঘাত) অনুভূত হয়, যার মধ্যে তিনটি ছিল রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার বেশি। আবার একটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫।

    ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে কেবল তুরস্কেই প্রাণহানির সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস।

    এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ভূমিকম্পে হতাহতদের খবর আসার শুরুতে সতর্ক করে জানিয়েছিল, শক্তিশালী এ ভূমিকম্পে শেষ পর্যন্ত মৃত্যু আটগুণ বাড়তে পারে।

    মাহফুজা ৭-২

    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    আলোচিত খবর