তুরস্কের দক্ষিণ এবং সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৩৭৯ জনে।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, গত ৮০ বছরের ইতিহাসে সোমবার সর্বোচ্চ শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে তুরস্ক ও সিরিয়া। ভূমিকম্পে হাজার হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। এখন পর্যন্ত উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ ১৩৭৯ প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে ধ্বংসস্তূপের নিচে শত শত মানুষ আটকা পড়ায় হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন দেশ দুটির কর্মকর্তারা।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, তুরস্কে ভূমিকম্পে ৯১২ জন নিহত এবং ৫ হাজার ৩৮৩ জন আহত হয়েছেন। তবে ধ্বংসস্তূপের নিচে তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকায় মৃতের সংখ্যা কতটা বাড়তে পারে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন তিনি।
ভয়াবহ এই বিপর্যয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৪৫টি দেশ সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানিয়েছেন এরদোয়ান।
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়- সিরিয়াতে মারা গেছেন ৪৬৭ জন।
খবরে বলা হয়, ভূমিকম্প আঘাত হানার সময় অনেক মানুষ ঘুমিয়ে ছিলেন। ভবনের ধ্বংসস্তূপে অনেকে আটকা পড়েন। অনেকে মারা গেছেন।
সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতির বরাতে বিবিসি ও এএফপি জানিয়েছে, সিরিয়ার আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামা এবং টারতুস প্রদেশে ৪৬৭ জন মারা গেছেন।
ইউএসজিএস বলেছে, ভূমিকম্পে তুরস্কে প্রাণহানি এক হাজার থেকে ১০ হাজার জনে পৌঁছানোর সম্ভাবনা ৪৭ শতাংশ। আর ১০০ থেকে ১ হাজার জনে পৌঁছানোর সম্ভাবনা ২৭ শতাংশ। তবে ১০ হাজার থেকে এক লাখের মধ্যে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে ২০ শতাংশ। ইউএসজিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, রেকর্ড মাত্রার এই ভূমিকম্পে ব্যাপক হতাহত এবং ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এই ভূমিকম্পের বিপর্যয় প্রবল হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে সিরিয়ার সীমান্ত লাগোয়া তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গজিয়ানতেপ শহরে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ভূমিকম্প অনুভূত হয় প্রতিবেশী সিরিয়া, লেবানন, সাইপ্রাস, ইসরায়েলেও।
মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি বলেছে, তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, তুরস্কের সাতটি প্রদেশে অন্তত ২৮৪ জন নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন আরও ৪৪০ জন।
অন্যদিকে, সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে ভূমিকম্পের আঘাতে ৩২০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ার মানবাধিকারবিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা নতুন এ তথ্য জানায়। অন্যদিকে, সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত আহতের সংখ্যা ৬০০। এখনও ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়ে আছেন বহু মানুষ।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সিরিয়ার সরকার-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মৃতের সংখ্যা ৩৮৬ জনে পৌঁছেছে এবং ৬৩০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী হোয়াইট হেলমেটস বলছে, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কমপক্ষে ১৪৭ জন মারা গেছেন।
সিরিয়ার আলেপ্পো এবং হামা শহর থেকে তুরস্কের দিয়ারবাকির পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩৩০ কিলোমিটারের বেশি বিস্তৃত আন্তঃসীমান্ত এলাকায় অসংখ্য ভবন ধসে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
ভূমিকম্পে তুরস্কে অন্তত এক হাজার ৭১৮টি ভবন ধসে পড়েছে। দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতায় এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর আল-জাজিরার।
তিনি জানান, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে অসংখ্য মানুষ আটকা পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাছাড়া তুরস্কের গাজিয়ানটেপ ও কাহরামানমারাস প্রদেশেই নয় শতাধিক ভবন ধসে পড়েছে্ তিনি বলেন, ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় শহর ইস্কান্দারউনে একটি হাসপাতাল ধসে পড়েছে। তবে এই হাসপাতালে হতাহতের সংখ্যা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
‘দুর্ভাগ্যবশত, একই সময়ে আমরা অত্যন্ত কঠিন আবহাওয়ার সাথেও লড়াই করছি,’ সাংবাদিকদের বলেছেন ওকতে।
উদ্ধারকাজে নামানো হয়েছে এয়ারক্রাফট। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বানও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
এরই মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ।
মাহফুজা ৬-২