আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আয়ার্সে পুলিশ ও বিশ্বকাপ জয় উদযাপনকারীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। সংর্ঘষের ঘটনায় ৮ পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৩ জন।
ধাক্কা-ধাক্কি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার একটা পর্যায়ে পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়লে নেভি হেলিকপ্টারের মাধ্যমে মেসিদের ছাদখোলা বাস থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়।
দেশটির নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংঘর্ষের ঘটনায় ৩১ জন আহত হয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে ১৩ জনকে। ধারণা করা হচ্ছে, জয় উদযাপন করতে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ জড়ো হয়েছিল।
জরুরি সার্ভিসের প্রধান আলবার্তো ক্রেসেন্টি বলেছেন, আহতদের বেশিরভাগকে শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে ফার্নান্দেজ, রামোস মেজিয়া, রিভাদাভিয়া, ডুরান্ড ও আর্জেরিচ।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ওবেলিস্কের মধ্যে নিজেদের ব্যারিকেড দিয়ে রাখে ফুটবল ভক্তরা। পাশাপাশি পুলিশকে লক্ষ করে পাথর ও বোতল নিক্ষেপ শুরু করে।
এর আগে মেসিদের ছাদখোলা বাসে করে কেন্দ্রীয় ওবেলিস্কো মনুমেন্টে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
বিশ্বকাপ জিতে স্থানীয় সময় সোমবার গভীর রাতে আর্জেন্টিনায় পৌঁছায় মেসিরা। তাদের একনজর দেখতে ইজাজা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে লাখ লাখ লোক জড়ো হয়। বিমানবন্দর থেকে মেসিদের ছাদখোলা বাসে করে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) হেডকোয়ার্টার্সের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।
তাদের বহনকারী ছাদখোলা বাসের চারদিকে তখন জনসমুদ্র। তারা নেচে-গেয়ে অভিবাদন জানাতে থাকেন বিশ্বকাপ জয়ী বীরদের। বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্যরাও তাদের সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করেন নেচে-গেয়ে। জনসমুদ্রের মধ্যে সংকীর্ণ একটি পথ তৈরি করে গানের তালে তালে কচ্ছপ গতিতে এগিয়ে যায় বিশ্বকাপ জয়ীদের বহনকারী ছাদখোলা বাস। অবশ্য জনতার চাপ সামাল দিতে গলদঘর্ম হতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। বিমানবন্দর থেকে খেলোয়াড়রা যান আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) হেড কোয়ার্টারে। সেখানেই তারা বাকিটা সময় বিশ্রাম নেন।
এরপর স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময় বুধবার) সকালে আবার ছাদখোলা বাসে শুরু হয় ‘ভিক্টরি প্যারেড’। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই প্যারেডে অংশ নেয় প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। প্রতিটি রাস্তায় তিল ধারনের ঠাঁই ছিল না। রাস্তার পাশের বিদ্যুতের খুঁটিতে উঠে মেসি-ডি মারিয়াদের স্পর্শ করার চেষ্টা করেন অনেকে। তাদের বাসে ওঠারও চেষ্টা করেন।
রাস্তার ফ্লাইওভারগুলোতেও ছিল জনতার ঢল। মেসিদের বহনকারী ছাদখোলা বাস যখন ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যাচ্ছিল তখন কয়েকজন বাসের মধ্যে লাফিয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে একজন পড়ে যান বাইরে। এরপর থেকে শুরু হয় হট্টগোল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করে পুলিশ। তাতে বেঁধে যায় সংঘর্ষ। একটা পর্যায়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে। তখন মেসিদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নেভি হেলিকপ্টার ডাকা হয়। আর সেই হেলিকপ্টার দিয়ে ছাদখোলা বাস থেকে মেসি-ডি মারিয়া-মার্তিনেজদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় এএফএ হেডকোয়ার্টার্সে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। জনতার আক্রমণের মুখে একদল পুলিশকে শেইল্ডের নিচে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ওবেলিস্ক স্মৃতিস্তম্ভের ২৩৫ ফুট উপর থেকে কয়েকজনকে উদ্ধার করে।
এদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের ওপরও হামলা করে। তার মধ্যে জার্মানির এআরডি’র দক্ষিণ আমেরিকা প্রতিনিধি ম্যাথিয়াস এইবার্ট রয়েছেন। তিনি লাইভে থাকাকালিন একজন তার মাথায় রেপ্লিকা ট্রফি দিয়ে বাড়ি মারেন।
মাহফুজা ২১-১২