৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১১ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

    সর্বশেষ খবর

    স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের অনুসারী রিমন এর আগে অন্তঃসত্ত্বা নারীর পেটে লাথি মেরেছিলেন

    রিমন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ও হাজীপুর ইউনিয়নের এক আতঙ্কের নাম ছিলো রিমন বাহিনী। রিমন ও তার সহযোগীরা সরাসরি দলীয় কোনো পদ-পদবিতে না থাকলেও তারা সবাই ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের অনুসারী। এ কারণে এলাকার মানুষজনও তাদের ভয়ে মুখ খুলতে চান না।  রিমনদুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুরে গ্রামে রিমনের বাড়ি। কিন্তু রিমন সব সময় হাজীপুর ইউনিয়নে আড্ডা দেয়। এ ইউনিয়নে রিমন তার সহযোগী।

    এবার আলোচনায় আসে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় বাবার কোলে গুলি খেয়ে প্রাণ দেয়া  জান্নাতুল ফেরদাউস তাসপিয়া হত্যার মধ্য দিয়ে।

    এ হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মো. রিমন (২৫) পাঁচ দিন আগেও এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর তলপেটে লাথি মেরেছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

    তবে এ বিষয়ে ওই নারীর পরিবার থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। তবে পুলিশ বলছে, হাজীপুরের সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে অভিযোগ করা হয়নি। এ বিষয়ে হাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ বলেন, কয়েক দিন আগে আমার ভাই খুরশিদ আলম আমাদের একটি জমির মাটি বিক্রি করেন একই এলাকার মো. বাদশার কাছে। মাটি কেটে নেওয়ার সময় ছয় ফুট গভীর করে মাটি কাটেন বাদশা। আমি এর প্রতিবাদ করি। এর জের ধরে বাদশা পাঁচ দিন আগে রিমন, মহিনসহ একদল সন্ত্রাসীকে ভাড়া করে আমার বাড়িতে গুলি করেন ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান।

    তিনি আরও বলেন, এ সময় আমার চার মেয়ে এগিয়ে আসে। এক মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তার তলপেটে লাথি দেয় রিমন। আরেক মেয়ের পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। তখন আমাকেও মারধর করে রিমন। ওই ঘটনায় থানায় অভিযোগ করার পর উপপরিদর্শক (এসআই) জসিম উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে একটি গুলির খোসাও উদ্ধার করেন। কিন্তু আমার অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি পুলিশ।

    হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে পলাতক থাকায় অন্তঃসত্ত্বা নারীর তলপেটে লাথি মারার অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও রিমনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

    হাজীপুর গ্রামের আরেক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুরে গ্রামে রিমনের বাড়ি। কিন্তু রিমন সব সময় হাজীপুর ইউনিয়নে আড্ডা দেয়। এ ইউনিয়নে রিমন তার সহযোগী মহিন, রহিম, বাদশাসহ ২০ থেকে ২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছে। এরা এলাকায় প্রকাশ্যে গাঁজা ও ইয়াবার ব্যবসা করে। এলাকাবাসী কারও সঙ্গে কোনো ঘটনা ঘটলে তারা একটি পক্ষ নিয়ে অন্য পক্ষের ওপর চড়াও হওয়া, বাড়িঘরে হামলা করা, জিম্মি করে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেওয়াই তাদের কাজ।

    হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ মো. আজিম মির্জা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ ও র‍্যাবকে দুদিন আগেও সন্ত্রাসী রিমন ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করার জন্য অনুরোধ করেছি। তার সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছি। কিন্তু তারা আমার অভিযোগে কর্ণপাত করেনি। তাদের নীরবতার কারণেই আজ একটি ফুটফুটে শিশুকে প্রাণ দিতে হলো।

    হাজিপুর ইউনিয়ন সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে, এমনটা স্বীকার করে চেয়ারম্যান বলেন, এখানে আমরা কেউ নিরাপদ নই। মহিন, রিমন ও তার বাহিনীর সদস্যরা গোটা হাজীপুরকে সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করেছে। তাদের কাছে এলাকার মানুষজন জিম্মি অবস্থায় আছে। আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর এসব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য থানা-পুলিশকে অনুরোধ করলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

    তবে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, রিমন ও তার সহযোগীরা সরাসরি দলীয় কোনো পদ-পদবিতে না থাকলেও তারা সবাই ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের অনুসারী। এ কারণে এলাকার মানুষজনও তাদের ভয়ে মুখ খুলতে চান না।

    তবে রিমন ও তার সহযোগীদের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল খোরশেদ। তিনি বলেন, রিমনসহ যেসব সন্ত্রাসীর নাম আলোচনায় এসেছে, তারা কেউই আওয়ামী লীগ কিংবা সহযোগী কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নয়। তারা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। পুরো হাজিপুরের মানুষ তাদের হাতে জিম্মি। তিনি এসব সন্ত্রাসীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

    পাঁচ দিন আগে ফিরোজ আলমের বাড়িতে ককটেল হামলা ও গুলির বিষয়ে থানায় অভিযোগ করার কথা সঠিক নয় উল্লেখ করে বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি বলেন, রিমনসহ হাজীপুর ও লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার সন্ত্রাসীদের ধরতে পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেছে। রিমনের বিরুদ্ধে থানায় এর আগে আটটি মামলা আছে। প্রায় সব মামলাই মারামারির।

    ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মো. আজিম কখনো হাজীপুরের সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে অভিযোগ করেননি বলে দাবি করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

     

    নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও তদন্ত) দীপক জ্যোতি খীসা বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব আসামিকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে আমরা বদ্ধপরিকর। ১৭ জনকে আসামি করে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এরই মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    আলোচিত খবর