সুচিকিৎসার নামে প্রলোভন দেখিয়ে নিরীহ মানুষকে জিম্মি করে অবৈধভাবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রয়কারী প্রতারক চক্রের সদস্য মোসা. বিউটি বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
সোমবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে র্যাব-৩ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। র্যাব জানায়, রোববার (৩ মার্চ) বিকেলে অশুলিয়া থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিউটিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী এক ব্যক্তির স্ত্রী শারীরিকভাবে অসুস্থবোধ করেন। চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে বিউটি তাদের নিজ বাসায় যেতে বলেন। ওই ব্যক্তি এবং তার স্ত্রী পরদিন বিউটির ভাড়া বাসায় যান। আলোচনার এক পর্যায়ে তাদের ভারতে নিয়ে সুচিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবে বলে প্রলোভন দেখান বিউটি।
ভুক্তভোগীরা বিউটির প্রলোভন বুঝতে না পেরে তাকে বিশ্বাস করেন। তার পরামর্শে ওই ব্যক্তি ও তার স্ত্রীর নামে পাসপোর্ট ও ভিসা করেন। গত ৪/১১/২০২১ তারিখে ভুক্তভোগী ও তার স্ত্রীকে বিউটি তার ভাড়াকৃত বাসা থেকে যশোরে নিয়ে যান এবং বেনাপোল বর্ডার দিয়ে ভারত পাঠিয়ে দেন।
ভুক্তভোগীরা ভারত পৌঁছালে সেখানে অবস্থানরত (পলাতক আসামি) মো. শহীদ এবং শেখ ফরিদ তাদের নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে রাখেন। চিকিৎসার নামে তারা কৌশলে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সেচ্ছায় কিডনি দান করার সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর নেন। কয়েক দিন ভুক্তভোগীকে কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর কথা বলে ভর্তি করান। সেখানে বিভিন্ন তারিখে ভুক্তভোগী শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এবং তার অপারেশন করতে হবে বলে জানায়। এর কয়েকদিন পর ওই হাসপাতালের একটি রুমে ভুক্তভোগীকে একা নিয়ে অজ্ঞান করে অপারেশন করা হয়।
অপারেশন শেষে জ্ঞান ফিরলে পেটের বাম পাশে সেলাই দেখে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করেন ভুক্তভোগী। ডাক্তার জানান, তিনি কিডনি সেচ্ছায় দান করেছেন। তখন আসামিদের কাছ থেকে তার কিডনি বিক্রি করার কথা জানতে চাইলে তারা তকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখান এবং চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি স্ত্রীসহ ভুক্তভোগীকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশে ফিরে সুচিকিৎসা না পেয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন ওই ব্যক্তি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ জানতে পারে, মানব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রয়কারী চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিরীহ লোকদের সুচিকিৎসার নামে প্রলোভন দেখিয়ে জিম্মি করে দেশে-বিদেশে অবৈধভাবে মানব দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে আসছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য র্যাব-৩ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।