ইউরোপ-আমেরিকায় পাঠানোসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মো. মোরশেদ রানা আবির নামে এক প্রতারককে আটক করেছে র্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে পাসপোর্ট, চেক বই ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) চান্দগাঁও র্যাব ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ।
তিনি বলেন, এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর এলাকায় সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে মো. মোরশেদ রানা আবিরকে আটক করা হয়েছে। এ সময় তার নামে বিভিন্ন কোম্পানির ভিজিটিং কার্ড, একাধিক ব্যাংকের ৮টি চেক বই, ৬টি এটিএম কার্ড, বিভিন্ন ব্যক্তির ৮টি পাসপোর্ট, ১০টি স্ট্যাম্প, ৩টি অঙ্গিকারনামা, ২৫টি এনআইডি কার্ডের ফটোকপি, ৭৫টি ছবি এবং বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার জব্দ করা হয়।
এম এ ইউসুফ বলেন, প্রতারক মো. মোরশেদ রানা আবিরের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। প্রতারণার জন্য প্রথমে জনবহুল শহর চট্টগ্রাম ও ঢাকায় এসে অবস্থান করেন। এরপর তিনি শহরের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পাঁচ তারকা আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিং মল, জনবহুল এলাকা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে আসা যাওয়া শুরু করেন। একপর্যায়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে পারবেন এমন লোকদের টার্গেট করেন। পরে তাদের সঙ্গে মোবাইল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে সখ্য গড়ে তোলেন।
একপর্যায়ে তিনি ভিকটিমকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়া ও বিদেশ পাঠানোর প্রলোভন দেখান। তারপর ভুক্তভোগীকে শহরের বিভিন্ন নামিদামি জায়গায় পরীক্ষার জন্য ডাকেন। তার দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী তিন তারকা আবাসিক হোটেলে পৌঁছালে ভিকটিমকে ওয়েটিং রুমে বসিয়ে রাখেন মোরশেদ। বলেন আপনি এখানে বসেন। ‘বস’ আপনাকে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে উপর থেকে দেখবে।
এরপর মোরশেদ কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সেজে ফাইলপত্র হাতে নিয়ে লিফটে করে উপরে ওঠার অভিনয় করেন। কিছুক্ষণ পর ঘুরে এসে বলেন বস আপনাকে পছন্দ করেছে আপনার চাকরি হয়ে যাবে। তবে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা কম, উচ্চতা একটু কম, বুকের মাপ কম, চোখের দৃষ্টিতে সমস্যা, চাকরির অভিজ্ঞতা নেই এসব বলে ভিকটিমকে মানসিকভাবে দুর্বল করেন। একপর্যায়ে বসকে ম্যানেজ করতে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা বেশি দাবি করতেন তিনি।
তিনি বলেন, মোরশেদ অধিকাংশ সময় ভুক্তভোগীদের সঙ্গে দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর সামনে দেখা করতে বলতেন। বিমানবন্দরের গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় তিনি মোবাইলে বিভিন্ন দেশের এজেন্সির সঙ্গে ইংলিশ, বাংলাসহ অন্যান্য ভাষা ব্যবহার করে ভুয়া কথোপকথন করতেন। এভাবে তিনি কমপক্ষে ৫০ জনের সঙ্গে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।