রাজধানীর গুলশানের সুবাস্তু টাওয়ারে গত বৃহস্পতিবার রাতে নিজ বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন এশা। এ ঘটনায় এশার মা সানজিদা নাহার প্রেমিক প্লাবন ঘোষের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে সানজিদা নাহার অভিযোগ করেন, এশাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন প্রেমিক প্লাবন।
এরশাদ শিকদারের মেয়ে জান্নাতুল নওরিন এশার (২২) সঙ্গে মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরের প্লাবন ঘোষ (২৪) নামে এক যুবকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সনাতন ধর্ম পরিবর্তন করে প্লাবন এশাকে বিয়ে করবেন বলে কথা দিয়েছিলেন কিন্তু পরে ধর্মের কারণেই কথা রাখতে পারবেন না বলে বিয়ের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া শুরু করেন প্লাবন। এভাবে প্লাবন ধীরে ধীরে এশাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেন।
এমন দাবি করছে এশার পরিবার। প্রেমিকের প্ররোচনাতেই আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে এশার পরিবারের পক্ষ থেকে।
এজাহারে সানজিদা নাহার বলেন, প্লাবন ঘোষের সঙ্গে এশার দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্লাবন সনাতন ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলিম হয়ে এশাকে বিয়ে করবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। এশা মাঝে মধ্যে প্লাবনের সঙ্গে ঘুরতে যেতেন।
ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে অভিযোগনামায় এশার মা বলেন, গত বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টায় প্লাবন এশা ও তার এক বান্ধবীকে আমাদের বাসার নিচ থেকে ঘুরতে নিয়ে যায়। এশার বান্ধবী আমাকে জানায়, ঘোরাঘুরির এক পর্যায়ে এশা ও প্লাবনের মধ্যে মোবাইলে অন্য একটি কল আসাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে এশার বান্ধবী তাদের দু’জনকে নিজের বাসায় নিয়ে গিয়ে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করে। সেখানে সমাধান না হওয়ায় এশা বাসায় চলে আসে। বাসায় এসে এশা তার রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ফেলে। আমি তখন বাসায় ঘুমাচ্ছিলাম। পরে জানতে পারি, শুক্রবার ভোর ৫টা ২৪ মিনিটে প্লাবনের কাকা আমার মেয়ের বান্ধবীকে ফোন করে জানায়, এশার বাসায় যাও, সে পাগলামি করছে, আত্মহত্যার চেষ্টা করছে।
এরপর ভোর ৫টা ২৯ মিনিটে প্লাবন আমাকে ফোন করে জানায়, আপনার মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছে। আমি তার ফোন পেয়ে দ্রুত এশার রুমের দরজা খোলার চেষ্টা করি। কিন্তু দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পাই। পরে বাসার সিকিউরিটি গার্ড মেজবাহ, আলামিন ও এশার বান্ধবীর সহায়তায় দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করি। আমরা দেখতে পাই, এশা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে। এরপর সিকিউরিটি গার্ডদের সহায়তায় আমরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এশা মারা যায়।
এজাহারে এশার মা আরও অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি, তারা ভিন্ন ধর্মের হওয়ায় বিয়ের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল প্লাবন ঘোষ। এজন্য সে কৌশলে এশার সঙ্গে ঝগড়া বাধায় এবং ইচ্ছে করেই এশাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে। প্লাবন এশাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে।
জান্নাতুল নওরিন এশা এরশাদ শিকদারের দ্বিতীয় স্ত্রী সানজিদা নাহারের মেয়ে। সানজিদা মেয়েকে নিয়ে থাকতেন রাজধানীর গুলশানের সুবাস্তু নজরভ্যালির শাহাজাদপুরের একটি বাসায়।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, শুক্রবার রাতে মৃত জান্নাতুল নওরিন এশার মা সানজিদা নাহার বাদী হয়ে প্লাবন ঘোষের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে এশার প্রেমিক প্লাবন ঘোষকে মামলায় আসামি করা হয়। বিষয়টি তদন্তাধীন। এ বিষয়ে তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) দিবাগত রাতে রাজধানীর গুলশানের সুবাস্তু টাওয়ারের বাসায় গলায় ফাঁস দেন জান্নাতুল নওরিন এশা। শুক্রবার (৪ মার্চ) ভোর ৬টার দিকে অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক এশাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের আত্মীয় সুমি আক্তার ওই সময় জানিয়েছিলেন, প্লাবন ঘোষ নামের এক ছেলের সঙ্গে এশার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বৃহস্পতিবার দু’জনের মধ্যে ঝগড়া এবং কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে এশা তার রুমে গিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেন।