তুরস্কে ও সিরিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩৫১ জন মারা গেছেন। স্মরণকালের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত তুরস্ক-সিরিয়ায় এখন চলছে শোকের মাতম।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ ইউএসজিএস বলছে, এই সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। খবর সিএনএন ও আল-জাজিরা। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত সব এলাকাতেই উদ্ধারকারী দল পৌঁছে গেছে।
সংস্থাটি বলেছে, ভূমিকম্পে তুরস্কে প্রাণহানি এক হাজার থেকে ১০ হাজার জনে পৌঁছানোর সম্ভাবনা ৪৭ শতাংশ। আর ১০০ থেকে ১ হাজার জনে পৌঁছানোর সম্ভাবনা ২৭ শতাংশ। তবে ১০ হাজার থেকে এক লাখের মধ্যে পৌঁছানোর সম্ভাবনাও রয়েছে, সেটি ২০ শতাংশ।
ইউএসজিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেকর্ড মাত্রার এই ভূমিকম্পে ব্যাপক হতাহত এবং ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এই ভূমিকম্পের বিপর্যয় প্রবল হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, তুরস্কেই ১৫৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর সিরিয়ার সরকার ও বিদ্রোহীদের দখলে থাকা এলাকাগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সেখানে ৮১০ জন নিহত হয়েছে দুই দেশে আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১০ হাজার মানুষ। তবে উদ্ধারকাজ শেষ না হওয়ায় উভয় দেশে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আল-জাজিরা জানায় সোমবারের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের কারণে তুরস্কে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থার (এএফএডি) তথ্য অনুযায়ী, তুরস্কে ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ৪৯৮ জনে পৌঁছেছে। এএফএডি মহাপরিচালক অরহান তাতার বলেন, ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৪৯৮ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৬৩৪ জন। দেশজুড়ে ২ হাজার ৮৩৪টি ভবন ধসে গেছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, সিরিয়ায় ৮১০ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করার পর তুরস্ক এবং সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে।
ভূমিকম্প আঘাত হানার সময় অনেক মানুষ ঘুমিয়ে ছিলেন। ভবনের ধ্বংসস্তূপে অনেকে আটকা পড়েন। অনেকে মারা গেছেন। এই ভূমিকম্পে সিরিয়ায় প্রায় ৩ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
এরপর সোমবার দুপুরে ও বিকালে আরও দুইবার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পে তুরস্কে ২ হাজার ৮৩০টি ভবন ধসে পড়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
আলজাজিরার প্রতিনিধি সুহাইব আল-খালাফ সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে বলেছেন, উদ্ধারকারীরা মরিয়া হয়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে লোকজনকে বের করার চেষ্টা করছেন। সুহাইব আল-খালাফ বলেন, ‘উদ্ধারকারীরা প্রত্যেক ১০ মিনিটে একটি করে মরদেহ বের করে আনছেন।’ সিরিয়াজুড়ে অসংখ্য ভবন ধসে পড়েছে। তিনি বলেন, এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে শত শত মানুষ আটকা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ‘মরদেহ বের করে আনার পর আমরা ধ্বংসস্তূপের ওপরে মানুষের আর্তনাদ দেখছি; তারা (উদ্ধারকারীরা) একটি শিশু পেয়েছে; সে জীবিত বলে মনে হচ্ছে। পরে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ভূমিকম্পের কারণে হাজার হাজার মানুষ আহত হওয়ায় এখন সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো। তিনি বলেন, লোকজনকে হাসপাতাল, এমনকি হাসপাতালের বারান্দায়ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রক্তের প্রচুর সংকট দেখা দিয়েছে।
তুরস্কের দক্ষিণের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে ভূমিকম্পের প্রথম আঘাত হানার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর সেখান থেকে ৮০ মাইল দক্ষিণের কারামানমারাস প্রদেশে দ্বিতীয় ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির তথ্য নতুন করে আসতে শুরু করেছে। যে কারণে প্রাণহানি ও ভবন ধসে যাওয়ার ঘটনা আরও বাড়তে পারে বলে তুর্কি কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।
সিরিয়া জানিয়েছে, নতুন ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল দামেস্ক শহরও। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
ইউরোপীয় ভূমধ্যসাগরীয় ভূকম্পন কেন্দ্রে জানায়, সোমবার দুপুরে আঘাত হানা ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৭। এর উৎপত্তিস্থল ছিল তুরস্কের কাহরামানমারাস থেকে ৬৭ কিলোমিটার উত্তর উত্তর-পূর্বে এবং কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে দুই কিলোমিটার গভীরে
অবশ্য তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৬ এবং কেন্দ্র ছিল আরও কিছুটা গভীরে।
যদিও দ্বিতীয় ভূমিকম্প আঘাত হানার আগেই কাহরামানমারাসে প্রথম ভূমিকম্পে অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত থাকায় দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এ ঘটনাকে গত ৮৪ বছরের মধ্যে তুরস্কের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় বলে অভিহিত করেছেন।
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কে জরুরি উদ্ধারকারী দল ও ত্রাণ সহায়তা পাঠাচ্ছে পাকিস্তান। এসব সহায়তা খুব শিগগির দেশটিতে পৌঁছাবে বলে টুইটারে জানিয়েছে তুরস্কের পাকিস্তান দূতাবাস। খবর সিএনএনের।
পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের দুটি সি-১৩০ প্লেন তুরস্কে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। একটিতে ত্রাণ সামগ্রী এবং অন্যটিতে উদ্ধার ও অনুসন্ধানের জন্য ৩৬ জন কর্মী থাকবেন। তারা আজ রাতে বা আগামীকাল সকালেই রওয়ানা হতে পারেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বলেছেন, চিকিৎসক, প্যারামেডিক ও উদ্ধারকর্মীদের সমন্বয়ে একটি দল উদ্ধার ও ত্রাণ প্রচেষ্টায় সহায়তার জন্য তুরস্কে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া শিগগির ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে আরেকটি প্লেন রওয়ানা হবে।
সোমবার ভোরে তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্ত অঞ্চলে আঘাত হানা ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮। গত এক শতাব্দীর মধ্যে এ অঞ্চলে আঘাত হানা অন্যতম শক্তিশালী ভূমিকম্প এটি।
ভূমিকম্পে তুরস্কে প্রায় তিন হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এরদোয়ান। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু মানুষ আটকা রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
মাহফুজা ৬-২