১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

    সর্বশেষ খবর

    মিরাজের প্রথম সেঞ্চুরি ও মিরাজ-মাহমুদউল্লাহর রেকর্ড জুটটি; বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ ছুড়লো ভারতকে

    ভারতীয় বোলারদের বলে  কোণঠাসা অবস্থা বাংলাদেশের ।  ১৯ ওভার না হতেই ৬৯ রানে নেই ৬ উইকেট। বাংলাদেশের আকাশে ছিল ঘোর অন্ধকার। এই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব ভাবতে পারেননি কেউই। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর মেহেদি হাসান মিরাজ অন্ধকার কাটিয়ে দলকে আলোর পথ দেখালেন । ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে তাদের লড়াকু এক জুটিতে বাংলাদেশ পেলো ৭ উইকেটে ২৭১ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ।

    মিরাজ পেয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। মাহমুদউল্লাহর হাফসেঞ্চুরি ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৭তম। সপ্তম উইকেটে তারা ১৬৫ বলে গড়েন ১৪৮ রানের জুটি। যে কোনো উইকেটে যেটি কি না ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড।

    ৪৭তম ওভারে উমরান মালিকের বলে মাহমুদউল্লাহ আউট হন ৭৭ রান করে। ৯৬ বলে গড়া তার দায়িত্বশীল ইনিংসে ছিল ৭ বাউন্ডারির মার। তবে মিরাজকে আটকাতে পারেননি ভারতীয় বোলাররা।

    শেষ ওভারে তার সেঞ্চুরির জন্য দরকার ছিল ১৫ রান। শার্দুল ঠাকুরের করা ওভারের দ্বিতীয় আর চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে চলে আসেন মিরাজ। পঞ্চম বলে ২ আর ইনিংসের একদম শেষ বলে সিঙ্গেলস নিয়ে সেঞ্চুরির উচ্ছ্বাসে ভাসেন এই অলরাউন্ডার।

    মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টসভাগ্য ছিল বাংলাদেশের পক্ষে। প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক লিটন দাস।

    লিটনের সঙ্গে আজ ওপেন করেন এনামুল হক বিজয়। শুরুটা ভালোই করেছিলেন। কিন্তু সেই ভালোটা বেশিক্ষণ রইলো না। ৯ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১১ রান করা বিজয় জীবন পেয়েও সেটা হেলায় নষ্ট করলেন।

    মোহাম্মদ সিরাজের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে স্লিপে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন বিজয়। কিন্তু রোহিত শর্মা সেই ক্যাচ ফেলে দেন। হাতে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়েন ভারতীয় অধিনায়ক। পরের বলেই আউট বিজয়।

    ওভারের পঞ্চম বলটি বিজয়ের প্যাডে বল লাগলে আবেদন করেন সিরাজ, আম্পায়ারও আঙুল তুলে দেন। অধিনায়ক লিটন দাসের সঙ্গে পরামর্শ করে রিভিউ নিয়েছিলেন টাইগার ওপেনার। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, বল মিডল স্টাম্পে আঘাত হানতো।

    এনামুল হক বিজয়ের পর লিটন দাসকেও সাজঘরের পথ দেখান মোহাম্মদ সিরাজ। ভারতীয় এই পেসারের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক (২৩ বলে ৭)।

    ইনিংসের ১২তম ওভারে উমরান মালিক বল হাতে নিয়েই গতিতে ঝড় তুলেছেন। সাকিব আল হাসানকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে তাকে সামলাতে। এক ওভারেই কয়েকবার পরাস্ত হন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তবে ওই ওভারটি মেইডেন দিলেও আউট দেননি সাকিব।

    এক ওভার পর নাজমুল হোসেন শান্তকে পেয়ে আর উইকেট তুলে নিতে দেরি করেননি উমরান। প্রথম বলেই তিনি ১৫১ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতির এক বলে ভেঙে দেন শান্তর স্টাম্প। ৩৫ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ২১ রান করে ফেরেন বাঁহাতি এই ব্যাটার।

    এরপর সাকিব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ওয়াশিংটন সুন্দরকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে আকাশে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ২০ বলে ৮ রানেই থামে অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের ইনিংসটি।

    এরপর এক ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নেন ওয়াশিংটন সুন্দর। মুশফিক খেলছিলেন বেশ দেখেশুনে। সুন্দরের ঘূর্ণিতে তার প্রতিরোধও ভেঙে যায় ১৯তম ওভারে। মুশফিক ডিফেন্ডই করেছিলেন। বল তার গ্লাভসে লেগে শর্ট লেগ ফিল্ডার ধাওয়ানের হাতে চলে যায়।

    ২৪ বলে ২ বাউন্ডারিতে মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে ১২ রান। সুন্দরের তার ঠিক পরের বলেই আফিফ হোসেন লাইন মিস করে হন বোল্ড (০)।

    ১৯তম ওভারে ৬৯ রানেই নেই ৬ উইকেট। বাংলাদেশের জন্য বড় লজ্জাই অপেক্ষা করছিল। তবে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে অবিশ্বাস্য লড়াই করে দলকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর আগের ম্যাচের নায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ।

    ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ওয়াশিংটন সুন্দর। ৩৭ রানে তিনি নেন ৩টি উইকেট। দুটি করে উইকেট শিকার উমরান মালিক আর মোহাম্মদ সিরাজের।

    ৪৪.৩ ওভারে বাংলাদেশ ২০০ রান পূর্ণ করে। অথচ শুরুর দিকের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় শংকা ছিল দ্রুত অলআউটের। ভারতের বিপক্ষে রেকর্ড জুটি গড়ে মিরাজ-মাহমুদউল্লাহ ২০০ পার করেন।

    দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে এনামুল হক বিজয়ের ক্যাচ মিস করেন রোহিত শর্মা। পরের বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে মাঠ ছাড়েন। এর আগের ম্যাচেও জীবন পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি এনামুল। মোহাম্মদ সিরাজের আউটসাইড অফের বল খোঁচা দিয়ে বসেছিলেন এনামুল। স্লিপে থাকা রোহিত সহজ ক্যাচ ফেলে দেন। পরের বল ব্যাটেই লাগাতে পারেননি। পায়ে লাগলে আবেদনের সঙ্গেই সাড়া দেন আম্পায়ার। বাংলাদেশ রিভিউ নেয়, কিন্তু লাভ হয়নি। শুরুতে উইকেটের সঙ্গে রিভিউও হারালো স্বাগতিক শিবির। এনামুলের ব্যাট থেকে আসে ৯ বলে ১১ রান। ক্রিজে লিটন দাসের সঙ্গী নাজমুল হোসেন শান্ত।

     

    টানা দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস। বাংলাদেশ নেমেছে একাদশে এক পরিবর্তন নিয়ে। পেসার হাসান মাহমুদের পরিবর্তে একাদশে এসেছেন নাসুম আহমেদ।

    বাংলাদেশ একাদশ –লিটন দাস (অধিনায়ক), এনামুল হক বিজয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, আফিফ হোসেন ধ্রুব, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, নাসুম আহমেদ ও এবাদত হোসেন।

    ভারত একাদশ–রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শিখর ধাওয়ান, ভিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল (সহ অধিনায়ক, উইকেটরক্ষক), ওয়াশিংটন সুন্দর, আক্সার প্যাটেল, শারদুল ঠাকুর, দীপক চাহার, মোহাম্মদ সিরাজ ও উমরান মালিক।

    সিরিজ জয়ে আশাবাদী ডমিঙ্গো বলেন, ‘আমাদের দল এই সংস্করণে আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু এটা কঠিন নয়। তারা শক্তিশালীভাবে (ভারত) ফিরবে। আমাদের প্রথম ম্যাচ থেকে অনেক ভালো খেলতে হবে। আমরা আমাদের স্নায়ু ঠিক রাখতে পারলেই এই বাধা পেরোতে পারব।’

    এদিকে ভারত ছেড়ে দেবে না সহজে। বাঁহাতি ওপেনার শিখর ধাওয়ান বলেন আজকের  খেলা নিয়ে আমরা দারুণ আত্মবিশ্বাসী। প্রথম ম্যাচে হারা এটা আমাদের জন্য প্রথম কোনো ঘটনা নয়। এটা কিছুটা স্বাভাবিক। আমরা জানি কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়।

    শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে জিতে সিরিজে এগিয়ে আছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। এবার পালা ১ ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলার। লিটন দাসের দল সেদিকেই পাখির চোখ করে ভারতের বিপক্ষে নেমেছে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে। ভারতের সবশেষ সফরে ২০১৫ সালে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। ৭ বছর পর লিটন দাসের দলের সামনে আবারও সেই সূবর্ণ সুযোগ। অন্তত রেকর্ড বলছে তাই। ৩১ বার মুখোমুখি লড়াইয়ে বাংলাদেশ জিতেছে ৬ বার, তার মধ্যে ৫ বারই জয় দেশের মাটিতে। লিটন-সাকিবরা কি পারবেন সিরিজ জিততে?

    মাহফুজা ৭-১২

     

    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    আলোচিত খবর