সঞ্জয় ব্যানার্জী, দশমিনা (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা।। আর মাত্র কয়েক দিন বাকী ঈদুল আজহা’র। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে পটুয়াখালীর দশমিনায় স্থায়ী ও অস্থায়ী বসতে শুরু করেছে পশুর হাট। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই জমে উঠছে হাটের পশু কেনাবেচা। উপজেলার ছোট-বড় হাটগুলোতে অন্য উপজেলা থেকেও আসছেন ক্রেতারা-বিক্রেতা। বুধবার বেলা ১২টায় উপজেলার গছানী বাজার গরুর হাটের দৃশ্য।
এদিকে, গত দুই বছর করোনার প্রকোপে ঠিকমত বাজার না বসায় এবার খামারী ও গরু ব্যবসায়ীদের কাছে পর্যাপ্ত দেশী গরুর দেখা মিলছে যা প্রতিফলিত হচ্ছে হাটগুলোতে। কুরবানির জন্য ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে ছোট ও মাঝারি আকারের গরু। হাটে এসে পছন্দ হলেই তারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন গরু। কেউ কেউ অবশ্য শেষ মুহূর্তে কেনার অপেক্ষাতেও রয়েছেন। আর হাটগুলোতে ভারতীয় গরুর উপস্থিতি না থাকায় দেশি গরুতে ভালো দাম পাচ্ছেন বলে হাসি ফুটেছে খামারি ও গরুর ব্যবসায়ীদের মুখে। উপজেলার কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, কুরবানিকে সামনে রেখে উপজেলার পশুর হাটগুলোতে পা ফেলার যেন জায়গা নেই। এর মধ্যে বৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় কাদায় মাখামাখি হাটের প্রতিটি ইঞ্চি। বড় হাটগুলোতে জেলার বাইরে থেকেও গরু নিয়ে এসেছেন বিক্রেতারা, অন্য উপজেলার ক্রেতারাও রয়েছেন এসব হাটে।
হাট ঘুরে দেখা যায়, ছোট ও মাঝারি আকৃতির গরুর বিক্রিই সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে ছাগলও। তবে তুলনামূলক ভাবে বড় আকৃতির গরুর বিক্রি কম। ক্রেতারা বলছেন, বড় গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে অনেক বেশি। তাই বড় একটি গরু না কিনে দুয়েকজন দুইটি মাঝারি আকৃতির গরুও কিনেছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আনোয়ার হোসেন জানান, এ বছর জেলায় চাহিদা রয়েছে এক লক্ষ ২৮ হাজার গরু। খামার রয়েছে তিন হাজার পাঁচশত পচানব্বইটি সহ আরো অনেক ছোট খামার মিলিয়ে মোট একলক্ষ চৌতিশ হাজার পচানব্বইটি গরু এ জেলার আছে। এ বছর সদর উপজেলায় নয়টি, গলাচিপা উপজেলায় ১২টি, কলাপাড়া উপজেলায় ১০টি, দশমিনায় ছয়টি, মির্জাগঞ্জ উপজেলায় সাতটি, বাউফল উপজেলায় ১৩টি, দুমকি উপজেলায় চারটি ও রাঙাবালী উপজেলায় তিনটি পশুর হাট রয়েছে। জেলায় মোট কুরবানির পশুর হাটের সংখ্যা ৬৪টি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে হাটগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গঠন করা হয়েছে ৩২টি ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম।
দশমিনা বাজারে আসা গরু বিক্রেতা ও খামারিরা জানান, গরুর খাদ্যের দাম বেশি হওয়ার কারণে আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার গরু পালনে বেশি খরচ হয়েছে। তাই এবার গরুর দাম তুলনামূলকভাবে একটু বেশি। তবে ভারতীয় গরুর আমদানি না থাকায় তারা খানিকটা স্বস্তিতে রয়েছেন।
দশমিনা বাজারে গরু ব্যবসায়ী মো. ইদ্রিস বলেন, আমাদের দেশি গরুর বেচাবিক্রি ভালো হচ্ছে। আর গরুর ভালো দাম পেয়ে বিক্রেতারা খুশি হলেও খানিকটা নাখোশ ক্রেতারা।
উপজেলার গছানী বাজারে গরু কিনতে আসা ফারুক হোসেন বলেন, অনেক চেষ্টার পর ৭৭ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছি। বাজার ঘুরে দেখে মনে হলো এবার গরুর দাম বিগত বছরের চেয়ে বেশি। তারপরও কুরবানি তো দিতেই হবে। তাই টাকাটা বড় বিষয় নয়।
গছানী বাজারের ইজারাদার নজরুল ইসলাম বলেন, হাটে সব আকারের গরুরই আছে। তবে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা দামের গরুর আমদানি বেশি। লাখ টাকার গরুও আছে। তিনি আরও বলেন, মাঝারি আকারের গরুর আমদানি যেন বেশি, তেমনি বিক্রিও বেশি। ক্রেতারা এই দামের মধ্যেই গরু কিনতে পছন্দ করছেন। এই হাটে প্রতিদিন দুইশ থেকে আড়াইশ গরু বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে দশমিনা থানা ওসি মেহেদী হাসান জানান, পশুর হাটকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি। প্রতিটি পশুর হাটে নিরাপত্তা দিতে পুলিশ সদস্য তৎপর রয়েছে। কুরবানির ঈদকে ঘিরে ক্রেতারা পছন্দ অনুযায়ী তাদের পশু কিনে বাড়ি যেতে পারেন।