সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন বৃক্ষ প্রতিষ্ঠা একটি বড় পূজা। পৃথিবীতে কেউ চিরস্থায়ী নয়। তারা মনে করেন যেদিন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে সেদিন ভবো নদী পার হতে হবে। কিন্তু বেঁচে থাকতে তো অনেক পাপ হয়েছে তাহলে ভবো নদী কিভাবে পার হওয়া যাবে। বৃক্ষ প্রতিষ্ঠা করলে সেইদিন বট বৃক্ষ মা নদীর কিনারে এসে থাকবে আর বলবে বাবা তুমি আমার পিঠে চড়ো এই ভবো নদী পার করে দিবো। গাছেরও শুভ দিন রয়েছে। বটবৃক্ষ পূজার কথা ভারতীয় ধর্মীয় গ্রন্থে রয়েছে এই ধারনা থেকেই বট ও পাকুড় গাছের বিয়ে দেওয়া হয়েছে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে।
গতকাল বুধবার জেলার দেবীগঞ্জ পৌরসভার করতোয়া নদী তীর সংলগ্ন শ্বসান কালী মন্দিরের সামনে দুই বট গাছের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে । নয় বছর আগে মন্দীরে গাছ দুটি রোপন করা হয়েছিল। এখন তাদের বিয়ের বয়স হয়েছে মনে করে রীতিমত দুটি গাছের পিতা মাতা সেজে ঢাক ঢোল পিটিয়ে পুরোহিতের মাধ্যমে বিয়ে দেওয়া হয়। বট গাছ হচ্ছে কনে আর পাকুড় গাছকে বর সাজিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় পূজা আর্চনা কীর্তন সহ নানান খাবার দিয়ে প্রসাদ তৈরি হয়। দিনব্যাপি দুই বেহাইয়ের আতœীয় স্বজন সহ প্রায় হাজারও সনাতন ধর্মবলম্বী বিয়েতে অংশ নেয়। বিয়েতে কনে পক্ষ ছিল বাবুল চন্দ্র দাস এবং বর পক্ষ ছিল ভোলা চন্দ্র দাস । দুজন মিলে নয় বছর পূর্বে ওই দুটি বট গাছ রোপন করেছিলেন।
বিয়ের পর তাদের সম্পর্ক যাতে ভেঙ্গে না যায় এজন্য বাবুল চন্দ্র দাস এবং ভোলা চন্দ্র দাসকে সততা করে দেওয়া হয়। বিয়ের আগে দুই পক্ষ মিলে লগ্ন নির্ধারন করেন । বিয়ে উপলক্ষে বরযাত্রীদের জন্য দশ প্রকার খাবার দিয়ে তৈরি হয় প্রসাদ । বর গাছটিকে পড়ানো হয় সাদা রঙ্গের ধূতি এবং কনে গাছটিকে পড়ানো হয় লাল শাড়ি। পরে তাদেরকে গামছা উপহার দেন গ্রামবাসীরা। এ সময় মন্দিরের পাশে লাল কাপড় দিয়ে আলাদা কীর্তন মঞ্চ তৈরি করা হয়। সারাদিনই হয়েছে কীর্তন। আনন্দ কীর্তন, বিশেষ খাওয়া দাওয়া, বিশেষ পূজা আর্চনা করে বাড়ি ফিরেন দুই পক্ষই।