আফগানিস্তানে ভয়াবহ ঠান্ডায় এ পর্যন্ত ১৬৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শনিবার দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করে। আফগানিস্তানে গত ১০ জানুয়ারি থেকে তাপমাত্রা মাইনাস ৩৩ ডিগ্রিতে নেমে গেছে। ভয়াবহ তুষারপাত আর বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছে দেশটির সাধারণ মানুষ।
এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে এবারের ঠান্ডা সবচেয়ে ভয়াবহ বলে দাবি আফগানিস্তান আবহাওয়া দফতরের। আর এই অতিরিক্ত ঠান্ডার প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতেও। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ঘর গরম করার জ্বালানি জোগাড় করতেও অসমর্থ হয়ে পড়েছেন আফগানবাসী।
সহায়তাকারী সংস্থাগুলো জানায়, দেশটিতে ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ক্ষুধার্ত এবং ৪০ লাখ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।
দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় শনিবার জানায়, গত সপ্তাহে মৃতের সংখ্যা ৮৮ জন ছিল। সেই সংখ্যা এখন ১৬৬। দেশের ৩৪ টি প্রদেশের ২৪ টিতে মানুষের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আব্দুল রহমান জাহিদ এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, বন্যা, বাড়ি গরম করার জন্য গ্যাস হিটার ব্যবহার, আগুন লাগা ও গ্যাস লিকেজের কারণে এসব মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
একই সঙ্গে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে দেশটিতে মারা গেছে প্রায় ৭০ হাজার গবাদিপশু।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, এ সপ্তাহে উত্তর-পূর্ব বাদাখশান প্রদেশের একটি গ্রামেই শ্বাসকষ্টে ১৭ জন মারা গেছে। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ত্রাণ সহায়তার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ আব্বাস আখুন্দ বিবিসিকে বলেন, ‘আফগানিস্তানের অনেক এলাকা এখন তুষারে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে; উদ্ধারের জন্য সামরিক হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু তারা সবচেয়ে পাহাড়ি অঞ্চলে অবতরণ করতে পারেনি। তবে আগামী ১০ দিনের পূর্বাভাসে তাপমাত্রা উষ্ণ হবে।মোল্লা আখুন্দ বলেন, ‘আমরা যারা এখনও পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করছেন তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। পাহাড়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া বেশিরভাগ রাস্তা তুষারপাতের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। গাড়ি সেখানে আটকে গেছে এবং যাত্রীরা ঠান্ডায় মারা গেছে।’
আফগান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ ঠান্ডার কারণে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। এক টুইটে তিনি লেখেন, প্রকৃতির ওপর কারও হাত নেই। তবে ঠান্ডায় এমন প্রাণহানি কষ্টের বিষয়। তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সর্বোচ্চ সাহায্য করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রাণহানি রোধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
গত ডিসেম্বর থেকে আফগানিস্তানে অন্তত ৬টি বড় বিদেশি সহায়তা সংস্থা তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে। ফলে দেশটির অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।
মাহফুজা ২৯-১