সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের করতোয়া নদী থেকে শরিফুল নামের এক যুবকের হাত পা বাঁধা অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যার দায় স্বীকার করে তার স্ত্রী ফারজানা খাতুন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে শাহজাদপুর থানা কর্তৃক আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তথ্যটি নিশ্চিত করেন শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসিবুল ইসলাম। তিনি জানান, শরিফুলের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার তিন দিন পর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। সোমবার আসামি ফারজানা আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।
সোমবার দুপুর ১২টায় ফারজানা খাতুনকে থানা থেকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। দীর্ঘ সময় আদালতে বিচারকের সামনে ১৬৪ ধারায় সে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। পরে বিচারক তাকে সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
তিনি আরও বলেন, প্রায় দেড় মাস পূর্বে বেলতৈল ইউনিয়নের আগনুকালী গ্রামের মৃত আবু সামার ছেলে তাঁত শ্রমিক শরিফুল ও চর বেতকান্দি গ্রামের ফখরুল ইসলামের মেয়ে স্বামী পরিত্যাক্তা ফারজানার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে শরিফুলের শারীরিক অক্ষমতার কারণে ফারজানা অসুখী ছিলেন।
৯ জানুয়ারি রাত ১১টায় শরিফুল ফারজানাদের বাড়ি যান। এসময় ফারজানা শরিফুলকে বলেন কবিরাজ বলেছেন হাত পা বাঁধা অবস্থায় যদি নদীর শ্রোতের পানি তুলে পান করা হয় তাহলে শারীরিক অক্ষমতা দুর হবে।
পরে রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টায় দুজনে করতোয়া নদীর পোলঘাটে দুজনে যায়। এসময় শরিফুল পড়নের কাপড় খোলেন, পরে লুঙ্গির ছেড়া অংশ দিয়ে ফারজানা শরিফুলের হাত পা বেঁধে দেন।
এসময় শরিফুল একটি প্লাস্টিকের ছোট বোতল হাতে নিয়ে নদীর পানি তুলতে গেলে ফারজানা তাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিয়ে ঘাড় চেপে ধরেন।
ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে শরিফুল ফারজানার হাতে কামড় বসিয়ে দেন এবং এসময় ফারজানা ক্ষিপ্ত হয়ে শরিফুলের ঘাড় ভেঙে দেয়। পরে শরিফুলের মৃত্যু নিশ্চিত হলে ফারজানা তার দেহ পাশে থাকা শ্যালে নৌকার নিচে ঢুকিয়ে দেয়।
শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসিবুল ইসলাম আরও বলেন, কিছুদিন পূর্বেই স্বামী শরিফুলের শারীকিক অক্ষমতার বিষয়টি ফারজানা তার মা বুলবুলি খাতুনকে জানিয়ে ছাড়াছাড়ির আগ্রহের জানালে তাকে তার মা গালমন্দ করেন।বিষয়টি আত্মীয়-স্বজনদের জানিয়ে বিচ্ছেদের কথা বললে তারা ফারজানাকে বুঝিয়ে স্বামীর কাছে রাখেন।
আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন, শাহজাদপুর থানার পরিদর্শক তদন্ত সাজ্জাদুর রহমান, পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল মজিদ ও মামলার তদন্তকারী উপ-পরিদর্শক গোপাল চন্দ্র প্রমূক।
১৪ জানুয়ারি সকাল ১০টায় শিবরামপুর গ্রামের করতোয়া নদীর পোলঘাটে মরদেহ ভাসতে দেখে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মরদেহ উদ্ধার করার পর শরিফুলের মা ও পরিবারের সদস্যরা লাশটি সনাক্ত করেন।
পরে মরদেহ উদ্ধারের পর নিহতের স্ত্রী ফারজানা সহ ৪জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। এই দিন নিহতের মা সূর্য বানু অজ্ঞাত আসামীদের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে নিহত শরিফুলের স্ত্রী ফারজানা খাতুন গভীর রাতে শরিফুলকে নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে প্রতারণা করে হাত পা বেঁধে করতোয়া নদীতে ডুবিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
মাহফুজা ১৭-১