প্রায় আট মাস কারাভোগের পর সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা হাজী সেলিম কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।মঙ্গলবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে তিনি মুক্তি পান।
জামিনে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম। দুপুর ২টায় তিনি হাসপাতাল ছেড়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বিএসএমএমইউ পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. রেজাউর রহমান।
তিনি বলেন, দুপুর ২টার দিকে হাজী সেলিম হাসপাতাল ছেড়েছেন এবং যেহেতু তিনি জামিনে মুক্ত, তাই হাসপাতাল ছাড়ায় তার কোনো বাধা নেই।
কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, আদালতের জামিনামা কারাগারে আসে। পরে তা যাচাই-বাছাই করে হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ না থাকায় তাকে জামিন মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, দুপুরে হাজী সেলিম মুক্তি পান। এ সময় পরিবারের সদস্য, নিকট স্বজন ও নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন।
রেজাউর রহমান বলেন,উনি এখন পুরোপুরি সুস্থ আছেন। সুস্থ বলেই তিনি হাসপাতাল ছেড়েছেন। তারপরও ওনি যেহেতু কার্ডিওলজি রোগী, চিকিৎসকরা তাকে বেশ কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন। যেকোনো ধরনের সমস্যায় তাৎক্ষণিক হাসপাতালে যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার সেলিমের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি টিম হাজী সেলিমের জামিনের কাগজপত্র নিয়ে বিএসএমএমইউতে প্রবেশ করেন। পরে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের কাছে তাকে বুঝিয়ে দেন।
দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে গত ২২ মে তাকে কারাগারে পাঠান আদালত। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ওইদিনই তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষীদের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছিলো তার।
গত ৬ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে জামিন দেন। একইসঙ্গে ১০ বছর দণ্ডের বিরুদ্ধে হাজী সেলিমকে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে দুই ধারায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে তার সাজা বাতিল করেন। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় শুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
সে অনুসারে শুনানি শেষে ২০২১ সালের ৯ মার্চ বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেন। রায়ে ১০ বছরের দণ্ড বহাল থাকলেও তিন বছরের সাজা থেকে খালাস পান হাজী সেলিম। একইসঙ্গে রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।
২০২২ সালের ৯ মার্চ এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। রায়ে ৩০ দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। এসময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে তার জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গত ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় থাইল্যান্ডের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন হাজী সেলিম। আদালতের দণ্ড মাথায় নিয়ে হাজী সেলিম দেশ ছাড়ায় শুরু হয় বিতর্ক।
এরপর ৫ মে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশে ফেরেন হাজী সেলিম। দেশে ফিরেই লালবাগে তার নির্বাচনী এলাকার স্থানীয় এক বাসিন্দার জানাজায় অংশ নেন। পরে লালবাগ থেকে আজিমপুর কবরস্থানে গিয়ে স্ত্রীর কবর জিয়ারত করেন তিনি।
২২ মে হাইকোর্টের রায় অনুসারে আত্মসমর্পণ করার পর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক শহিদুল ইসলাম তার জামিন নামঞ্জুর করেন। এসময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে কারাগারে ডিভিশন ও সুচিকিৎসার আবেদন জানান। বিচারক কারাবিধি অনুযায়ী জেল কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। ২৪ মে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় দণ্ডের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন। একইসঙ্গে জামিন আবেদনও করেছিলেন হাজী সেলিম।
মাহফুজা ১৭-১