বিশ্বের দীর্ঘতম বিলাসবহুল নৌবিহারের উদ্বোধন করলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভারতের উত্তর প্রদেশের বারাণসী থেকে বিহার-পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশে হয়ে আসাম পর্যন্ত যাবে এই নৌবিহার। এর মাধ্যমে ভারতের ভারতের পর্যটনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো বলে জানালেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গঙ্গা বিলাস নৌবিহারের উদ্বোধন করেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, ‘গঙ্গা নদীতে বিশ্বের দীর্ঘতম নৌবিহার উদ্বোধন একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত। এটি ভারতের পর্যটনে নতুন যুগের সূচনা করবে।’
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই সেবা দেশটির পর্যটন খাতকে উৎসাহিত করবে এবং নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করবে।’
ভারতের অন্যতম প্রাচীন শহর বারাণসী থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে আসামের ডিব্রুগড় পর্যন্ত চলবে এ নৌবিহার। সফরকালে প্রমোদতরীটি নদীপথে ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে। এতে সময় লাগবে ৫১ দিন।
যাত্রাপথের বাংলাদেশেই রয়েছে প্রায় ১১০০ কিলোমিটার। এবং এর মধ্যে বাংলাদেশে কাটবে ১৫ দিন। বাংলাদেশে এই নৌবিহারের যাত্রাপথে পড়বে মোংলা বন্দর, সুন্দরবনের কটকা সমুদ্রসৈকত, হারবাড়িয়া, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, বরিশাল, মেঘনা ঘাট, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, মানিকগঞ্জের আরিচা ঘাট, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের চিলমারী। এরপর নৌবিহারটি ফের ভারতে প্রবেশ করে শেষ হবে আসমের ডিব্রুগড়ে।
ভারতের কেন্দ্রীয় জাহাজ এবং জলপথ পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গঙ্গা বিলাসে রয়েছে যাবতীয় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। সুইজারল্যান্ডের ৩২ জন পর্যটক নিয়ে প্রথম যাত্রা করছে বিশাল এই জাহাজ। পর্যটকরা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশিাপাশি দেখে নিতে পারবেন দু’ধারে থাকা বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য স্থানও।
বিলাস ও রুচির চূড়ান্ত এই নদীযাত্রাযান। এর ডেক, এর ডাইনিং হল, এর ড্রয়িংরুম, এর কমন স্পেস– প্রতিটি জায়গাই রঙে ও মেজাজে মনকাড়া। যা দেখেই বলে দেওয়া যায়, যাত্রীদের পক্ষে বিষয়টি একটা দারুণ অভিজ্ঞতা হতে চলেছে। বিলাসবহুল প্রমোদতরীতে ভ্রমণকারীদের আরাম-আয়েসের জন্য জিম, স্পা, উন্মুক্ত ডেকসহ থাকছে গান-বাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সুবিধাও। পাঁচ তারকা হোটেলের সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন জাহাজটিকে দেখার জন্য বৃহস্পতিবার থেকেই কৌতুহলী লোকজন বরাণসীর গঙ্গা তীরে ভিড় করতে শুরু করেন।
গঙ্গা বিলাসের পরিচালক রাজ সিং জানিয়েছেন, জাহাজটিতে মোট ১৮টি স্যুইট রয়েছে। ৩৬ পর্যটক এবং ৪০ জন ক্রুর থাকার জায়গা রয়েছে এতে। তিনি জানান, গঙ্গা বিলাসে দৈনিক মাথাপিছু ভাড়া ২৫ থেকে ৫০ হাজার রুপি। অর্থাৎ ৫১ দিনের ভ্রমণে খরচ পড়বে প্রায় ২০ লাখ রুপি। পর্যটকরা অনলাইনেই আসন বুক করতে পারবেন।
নৌপথ কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বলেছেন– আমাদের সভ্যতা নদীগুলির পাশেই গড়ে উঠেছিল। তাই নৌবিহারের মাধ্যমে পর্যটকেরা আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে দারুণ এক অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন।
বন্দর, নৌপরিবহন ও জলপথ মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এক টুইটে জানান, বারাণসী থেকে ডিব্রুগড় হয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে চার হাজার কিলোমিটার জুড়ে থাকবে গঙ্গা বিলাসের যাত্রাপথ। গঙ্গা বিলাস নৌবিহার উত্তর প্রদেশের বারাণসী থেকে যাত্রা শুরু করে বুক্সার, রামনগর ও গাজিপুর হয়ে অষ্টম দিনে পাটনা পৌঁছাবে। সেখান থেকে নৌযানটি কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে এবং ফারাক্কা-মুর্শিদাবাদ হয়ে ২০তম দিনে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানীতে পৌঁছাবে। পরের দিন সেটি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। পরবর্তী ১৫ দিন প্রমোদতরীটি বাংলাদেশের জলসীমায় থাকবে। এরপর গুয়াহাটি দিয়ে সেটি আবারও ভারতে ঢুকবে এবং শিবসাগর হয়ে ডিব্রুগড়ে শেষ গন্তব্যে পৌঁছাবে।
মাহফুজা ১৩-১