রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় সোলেডার শহর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করেছে । টানা কয়েকদিন ব্যাপক যুদ্ধের পর শুক্রবার শহরটিতে বিজয়ী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মস্কো। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও সিএনএনের খবরে এ তথ্য জানানো হয়।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ক্রমাগত বোমাবর্ষণ, বিমান হামলা ও রুশ বাহিনীর একটি গ্রুপের আর্টিলারির সাহায্যে সোলেডার দখল সম্ভব হয়েছে।
এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘১২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সোলেদার শহর মুক্ত হয়েছে, যা সফল আক্রমণাত্মক অপারেশন অব্যাহত রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
সোলেদার দখলের ফলে রুশ সেনারা এখন প্রতিবেশী বড় শহর বাখমুতে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সরবরাহ রুট বিচ্ছিন্ন করার সুবিধা পাবে।
তবে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা রাশিয়ার এই দাবিকে অস্বীকার করেছে। কিয়েভের পাল্টা দাবি, রাশিয়া ‘তথ্য দূষণ’ করছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের আঞ্চলিক গভর্নর পাভলো কিরিলিঙ্কো জানিয়েছিলেন, সোলেদারে এখনও ৫৫৯ জন বেসামরিক নাগিরক আছে। এদের মধ্যে ১৫ শিশু রয়েছে। এদেরকে শহর থেকে বের করে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
সোলেডার দখলের ফলে পার্শ্ববর্তী বড় শহর বাখমুটে ইউক্রেনের রসদ সরবরাহ আটকে দেওয়া এবং সেখানকার ইউক্রেনীয় সৈন্যদের অবরুদ্ধ করে ফেলা সম্ভব হবে বলে জানায় রাশিয়া। রুশ সৈন্যরা কয়েক মাস ধরেই বাখমুট দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার জন্য কৌশলগত দিক থেকে সোলেডার দখলের মূল্য হয়তো খুব বেশি নয়। তবে এটি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য একটি প্রতীকী বিজয় হিসেবে বিশ্বের সামনে উপস্থাপিত হবে।
তবে রুশ বাহিনীর সোলেডার দখলের দাবি অস্বীকার করেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর ইস্টার্ন গ্রুপের মুখপাত্র সেরহি চেরেভাতি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম আরবিসি-ইউক্রেনকে বলেছেন, শহরটিতে যুদ্ধ এখনো চলছে।
সোলেডারের পরিস্থিতি নিরপেক্ষভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি রয়টার্স। তবে সিএনএন জানিয়েছে, শহরটির কাছাকাছি থাকা তাদের একটি টিম শুক্রবার রাশিয়ার বিজয় দাবির পরেও সোলেডারে মর্টার ও রকেট ছোড়ার শব্দ শুনেছে।
কিন্তু সোলেডার থেকে আনুমানিক আড়াই মাইল দূরে থাকা সিএনএনের টিম শুক্রবার বিকেলে শহরটি থেকে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের বেরিয়ে যেতে দেখেছে। এটিকে তাদের কাছে সংগঠিত সৈন্য প্রত্যাহার বলে মনে হয়েছে।
এর আগে, ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র আভাস দিয়েছিলেন, তাদের কমান্ডাররা সোলেডার থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের চিন্তা করছেন। ইউক্রেনের ডেপুটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হান্না মালিয়ার সোলেডারের পরিস্থিতিকে ‘কঠিন’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।
বিবিসির খবর অনুসারে, ইউক্রেনীয় মুখপাত্র দাবি করেছিলেন, বাখমুট শহরের নিকটবর্তী সোলেডারে তাদের সৈন্যরা রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের ‘সবচেয়ে ভালো প্রস্তুতি নেওয়া’ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
গত বুধবারই ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন দাবি করেছিলেন, সোলেডার শহরটি তার বাহিনী দখলে নিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এক মাস ধরেই এ শহরটির নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই চলছিল। গত চার দিনে রুশ বাহিনী ও তাদের সমর্থকরা নতুন নতুন জায়গা দখল করেছে। তারা শহরটির অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। লবণের খনিসমৃদ্ধ শহর সোলেডারের প্রায় ১০ হাজার লোক বাসবাস করে।
মাহফুজা ১৩-১