এ বছরই পরীক্ষামূলকভাবে চালু হচ্ছে দুই বছরের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
বুধবার এনসিটিবি সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, চার বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য এ শিক্ষাবর্ষ থেকেই দুই বছর মেয়াদী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষামূলক প্রাক-প্রাথমিক স্তর চালু হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় শিখনসামগ্রী ও শিক্ষক নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ৩ হাজার ২১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু হবে । দেশের সব প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০২৪ সালে চালু হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের করা ২০২১ সালের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারির তথ্য বলছে, দেশে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেনসহ সব মিলিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ২টি। এর মধ্যে কিন্ডারগার্টেনগুলোয় কম বয়সী শিশুদের ভর্তি করা হয়। তবে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের এক বছর মেয়াদি প্রাক্-প্রাথমিকে এবং ছয় বছরের বেশি বয়সী শিশুদের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়।
রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, এটি আগেই হওয়া উচিত ছিল। তবে দেরিতে হলেও হচ্ছে, এ জন্য সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এটি যেন কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং পরীক্ষানির্ভর ও পুথিগত শিক্ষার বিষয় না হয়।
শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে বড় রকমের পরিবর্তন এনে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত যে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে, তাতে এখনো পিছিয়ে আছে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন। মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ শ্রেণিতে গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন শিক্ষাক্রম পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন শুরু হলেও প্রাথমিকে এখনো তা শুরু হয়নি।
সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিজ নিজ বিদ্যালয়ে ২ বছর মেয়াদী প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি পরিচালনা করবেন। তিনি দুই বছর মেয়াদী প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি পরিচালনা শেষে বিদ্যালয়ের অন্য শ্রেণিতে পাঠদান করবেন। বছরের প্রথমেই উক্ত কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করে রুটিন প্রণয়ন করতে হবে। প্রাক-প্রাথমিকের জন্য নির্বাচিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্যাচমেন্ট এলাকার ২০২৩’র জরিপ পরিচালনা করে ৪ বছরের বেশি বয়সী সব শিশুকে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তির উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
এতে আরও বলা হয়, ৪ বছরের বেশি বয়সী প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি ৩০ জন শিশু নিয়ে পরিচালিত হবে। তবে ভর্তিকৃত শিশুর সংখ্যা ৩০ এর বেশি হলে বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে (একাধিক শাখা খুলে) তাদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ তৈরি করতে হবে। তবে একাধিক শাখা বা ব্যাচ খোলা কোনোভাবেই সম্ভব না হলে উপযোগী নমনীয় কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে পরিচালনা করা যেতে পারে। ৪ ও ৫ বছরের বেশি বয়সী শ্রেণির জন্য আলাদা হাজিরাখাতা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। ৪ বছরের বেশি বয়সী প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিশু এবং ৫ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের একই সময়ে, একই শ্রেণিকক্ষে শ্রেণিকার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না বা উচ্চতর শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পেছনে বসানো যাবে না। খোলা জায়গায়, বারান্দা বা গাছতলায় বসিয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না।
বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুরা এক বছর মেয়াদী প্রাক-প্রাথমিক স্তরে পড়াশোনা করে প্রথম শ্রেণিতে যায়। দুই বছরের শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে শিশুর বয়স চার বছরের বেশি হলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবে এবং ছয় বছর বয়স পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিক স্তরে পড়বে। ছয় বছরের বেশি হলে তারা প্রথম শ্রেণিতে যাবে।
দেশে প্রথমে ২০১০ সালে স্বল্প পরিসরে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়। এরপর ২০১৪ সালে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক বছর মেয়াদী প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়।
দেশে এত দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঁচ থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুদের জন্য এক বছর মেয়াদী প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাস্তর চালু ছিল। যা ‘শিশু শ্রেণি’ নামে পরিচিত। ইংরেজি মাধ্যম ও কিন্ডারগার্টেনে প্লে, নার্সারি ও কেজি শ্রেণি প্রাক-প্রাথমিক স্তরের মধ্যে পড়ে।
মাহফুজা ১১-১