ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর সমর্থকেরা দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, কংগ্রেস ও সুপ্রিম কোর্ট ভবনে হামলা করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক শ’ লোককে গ্রেপ্তার করার দাবি করেছে। এই ঘটনায় তিন হাজার লোক জড়িত রয়েছে বলে একটি সূত্র দাবি করে।খবরটি জানায় আল-জজিরা, বিবিসি ও সিএনএন।
সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, বোলসোনারোর সমর্থকেরা রোববার ন্যাশনাল কংগ্রেস ও সুপ্রিম কোর্ট ভবনের জানালা ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করছে। তারা হস্তক্ষেপ লেখা ব্যানারও প্রদর্শন করে। এর মাধ্যমে দৃশ্যত তারা ব্রাজিলের সামরিক বাহিনীকে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ব্রাজিলের হলুদ, সবুজ পতাকা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ভবনের দিকে এগোচ্ছেন। কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে তারা ঢুকে যাচ্ছেন ভবনের ভেতর। ব্যাপক মানুষ জড়ো হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভবনের ছাদে। তাদের অনেকের গায়ে সবুজ ও হলুদ পোশাক পরা রয়েছে। এটি ব্রাজিলের জাতীয় পতাকার পাশাপাশি বোলসোনারো সরকারের প্রতীকও।
মাত্র এক সপ্তাহ আগে নির্বাচনে জয়ী বামপন্থী লুই ইনাসিও লুলা দা সিলভা ক্ষমতা গ্রহণের প্রেক্ষাপটে এ ঘটনা ঘটলো।
এ ঘটনা প্রসঙ্গে লুলা রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় ফেডারেল সিকিউরিটি ইন্টারভেনশন জারি করেছেন। চলতি মাসের বাকি সময় এই জরুরি আইন জারি থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে সরকারকে বিশেষ ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে। হামলার নিন্দা করে প্রেসিডেন্ট লুলা বলেন, ‘এই ফ্যাসিস্ট সমর্থকরা এমন কিছু করল, যা এ দেশের ইতিহাসে আগে কখনও হয়নি। যারা এই হামলা চালিয়েছে, তাদের আমরা খুঁজে বের করব এবং আইনের মাধ্যমে তাদের বিচার করা হবে।’
এদিকে ব্রাজিলে গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনায় বলসোনারো সমর্থকদের হামলা নানা ভিডিও ইতোমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
বোলসোনারোর সমর্থকেরা দাবি করে আসছে, লুলা ৩০ অক্টোবরের নির্বাচনে জয়ী হননি। নির্বাচনে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছিলো বলে তারা দাবি করছে।
রিও ডি জেনেরিও থেকে আল জাজিরার মনিকা ইয়ানাকিউ বলেন, বোলসোনারোর অনেক সমর্থক নির্বাচনের পর থেকে ব্রাসিলিয়ায় ক্যাম্প করে অবস্থান করছে।
গত বছর কট্টর দক্ষিণপন্থি বোলসোনারোকে হারিয়ে ব্রাজিলে ক্ষমতায় আসেন বামপন্থি লুইজ ইনাসিও লুলা ডা সিলভা। দেশের প্রশাসনিক কাঠামোয় এই হামালার জন্য তিনি আগের প্রেসিডেন্টকেই দায়ী করেছেন। রাজধানী ব্রাসিলিয়ার নিরাপত্তা বিষয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন লুলা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ব্রাজিলের পরিস্থিতিতে ‘ক্ষোভ’ প্রকাশ করেছেন। তিনি লুলার সাথে কাজ করা অব্যাহত রাখতে চান বলে জানান।
রোববার ব্রাজিলের কংগ্রেস, সুপ্রিম কোর্টের সদর দপ্তর ও প্রেসিডেন্ট প্যালেসে হামলার ঘটনা ফের একবার ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক ক্যাপিটলে হামলার কথাই মনে করিয়ে দিলো।
যুক্তরাষ্ট্রে যেমন ট্রাম্প সমর্থকরা হামলা চালিয়েছিলেন, তেমনই রোববার সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর সমর্থকরাও সবুজ-হলুদ পতাকা গায়ে জড়িয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে একে একে কংগ্রেস, সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট প্যালেসে ভাঙচুর চালান তারা।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বোলোসোনারো এখন পর্যন্ত নিজের হার স্বীকার করেননি। বরং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আয়োজিত নির্বাচনে পরাজয়কে তিনি ভোট গণনায় কারচুপি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও অক্টোবরে পরাজয়ের পরেই দেশ ছেড়েছেন বোলসোনারো। তিনি বর্তমানে ফ্লোরিডায় থাকেন।
বোলোসারো বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থান করছেন। তিনি এই ঘটনার ব্যাপারে নীরব রয়েছেন। লুলার শপথ গ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগে তিনি দেশত্যাগ করেন।
মাহফুজা ৯-১