বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার তার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরার জামিন আবেদন বিষয়ে শুনানির জন্য আজ দিন ধার্য রয়েছে। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আছাদুজ্জামানের আদালতে এ শুনানি হবে।
গেল ৩১ নভেম্বর বুশরার আইনজীবী ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করলে আদালত শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করেন। রামপুরা থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা সেলিম রেজা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
১৫ ডিসেম্বর ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুতে তার বান্ধবী আমাতুল বুশরার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। মামলার অভিযোগপত্রে বিষয়টি উল্লেখ করা হবে বলেও জানিয়েছে ডিবি। ডিবিপ্রধান বলেন, এটি আদালতের বিষয় এবং আমরা আমাদের রিপোর্টে জানিয়ে দেবো তার সংশ্লিষ্টতা না থাকার বিষয়টি।
৩৮ দিনের তদন্ত শেষে ডিবি জানায়, নিখোঁজ হওয়ার আগে ফারদিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। তিনি আত্মহত্যা করবেন সিদ্ধান্ত নিয়েই বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন।
১০ নভেম্বর সকালে রামপুরা এলাকার একটি বাসা থেকে বুশরাকে গ্রেফতার করা হয়। ওইদিনই তাকে আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে রামপুরা থানা পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
১৬ নভেম্বর পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে বুশরাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মজিবুর রহমান। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
দেড় মাসের বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছে বুশরা। বুশরার বাবার দাবি, তার মেয়ে ষড়যন্ত্রের শিকারএবং বিনা অপরাধে তাকে জেলে থাকতে হচ্ছে। হয়তো মেয়ে মুক্তি পাবে, কিন্তু এই যন্ত্রণা তাকে সারাজীবন কাঁদাবে।
ফারদিনের বাবা বলেন, ‘ছেলে খুন হলেও আত্মহত্যার গ্লানি বইতে হচ্ছে আমাদের। তিনি বলেন ‘আমিও চাই সে মুক্ত হোক, তবে তাকে প্রমাণ করতে হবে সে নির্দোষ।’
১৪ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ও র্যাব জানায়, ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন, এর সঙ্গে বুশরার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এরপর থেকে বুশরার পরিবারে আশার সঞ্চার হয়েছে। নির্দোষ মেয়েকে কাছে পেতে আকুল হয়ে পড়েছে পরিবার।
বুশরার বাবা মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি বুশরা ঘটনার সাথে জড়িত না। পুলিশও যাচাই-বাছাই করেছে। মেয়েটার লাইফটা শেষ হয়ে গেল এবং নিরাপরাধ মেয়েটা এতদিন জেলে। মেয়ের স্বাভাবিক জীবন নিয়ে উদ্বিগ্নে আছি। ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে তো। জীবনটাই শেষ হয়ে গেলো মেয়েটার। ৫ তারিখে ওর জামিন শুনানি আছে। সবাই দোয়া করবেন, ও যেন জামিন পায়। আর
ফারদিনের বাবা নুর উদ্দিন রানা বলেন, তদন্তকারী সংস্থা প্রভাবিত হয়ে সরে গেছে। আমার ছেলের ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, আমার ছেলে আত্মহত্যা করে নাই। ওর মধ্যে কোনো ধরনের হতাশা ছিল না। ফারদিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সেটা ধামাচাপা দিতে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে। পুলিশ বলছে, সে ইনট্রোভার্ট ছিল। যে ছেলে বিতর্ক করতো, উদ্ভাসে ক্লাস নিতো, বুয়েটে নিজের ক্লাসে রিপ্রেজেন করতো সে কেমন করে ইনট্রোভার্ট।
বুশরার বিষয়ে জানতে চাইলে নুর উদ্দিন বলেন, আমিও চাই না মেয়েটার জীবনটা নষ্ট হোক। তাকে প্রমাণ করতে হবে সে ঘটনার সাথে জড়িত না। ঘটনার ক্ষেত্র তৈরি করেনি। প্রমাণের ভিত্তিকে নির্দোষ হলে সে মুক্ত হবো। তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই।
বুশরার আইনজীবী হাবিবুর রহমান বলেন, তদন্ত সংস্থা বের করেছে ফারদিন আত্মহত্যা করেছে। তার মানে বুশরা ঘটনার সাথে জড়িত না। আমরা তিন দফা ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটআদালতে তার জামিন আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আদালত তাকে জামিন দেননি। পরবর্তীতে আমরা ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে তার জামিন আবেদন করি। ৫ জানুয়ারি জামিন শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে। আশা করছি, সার্বিক দিক বিবেচনা করে আদালত তাকে জামিন দিবেন।
৫ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন ফারদিন। ওইদিনই রাজধানীর রামপুরা থানায় এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন। নিখোঁজের দুদিন পর ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিন নূর পরশের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। ৮ নভেম্বর সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ফারদিনের মরদেহ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার দেউলপাড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় বুশরাসহ অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে ‘হত্যা করে লাশ গুম’ করার অভিযোগে মামলা করা হয়। রামপুরা থানায় নিহত ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
মাহফুজা ৫-১