দুর্নীতি নয়, মানুষের ভাগ্য গড়তে দেশে ফিরে এসেছি বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সব হারিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে এসেছি; এটাই আমার লক্ষ্য। ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর আমাদের সরকারের একটি নীতিমালা ছিল – ব্যবসাবান্ধব নীতি গ্রহণ করা, সেটাই করেছি।’
রোববার পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা-২০২৩ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় পূর্বাচলের ৪ নম্বর সেক্টরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে ২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেন তিনি।
দেশের চাহিদা মিটিয়ে কৃষিপণ্য এবং খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তুলতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
বিদ্যুৎ-গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ পেতে চাইলে খরচ দেয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের টাকায় এতো বেশি ভর্তুকি দিয়ে আর চালু রাখা সম্ভব নয়। টানা ক্ষমতায় থাকার ফলে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। এছাড়া প্রবৃদ্ধি ও মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থানের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। পণ্যের বহুমুখীকরণ ও নতুন বাজার তৈরির দিকে ব্যবসায়ীদের নজর দিতে হবে। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে ৫-জি চালু করা হবে। শিল্প-কারখানা অর্থনৈতিক অঞ্চলে করতে হবে, বাইরে করলে কোনো সার্ভিস পাবেন না।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা রপ্তানিযোগ্য কিছু পণ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। সেটাকে বহুমুখী করার কথা, আমি বার বার এ কথা বলে যাচ্ছি। এখনও বলছি, যত বেশি পণ্য বহুমুখী করতে পারবো, যত বেশি নতুন নতুন বাজার পাবো, তত বেশি পণ্য রপ্তানি করতে পারবো। আমাদের মানুষের কর্মক্ষমতাও যেন বাড়ে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।
বাণিজ্যমেলা উদ্বোধন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পূর্বাচলে দ্বিতীয়বারের মতো বাণিজ্যমেলা শুরু হলো। প্রথমবার যখন এখানে বাণিজ্যমেলা হয়, করোনার বিধিনিষেধে আসতে পারিনি। ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেছিলাম। তবে ডিজাইন থেকে শুরু করে সবকিছুতেই আমি ছিলাম।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, এফবিসিসিআই সভাপতি জসীম উদ্দিন এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান, মেলায় অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি প্রতিনিধি এবং স্থানীয় জনসাধারণরা উপস্থিত ছিলেন।
স্থায়ী ভেন্যুতে দ্বিতীয় বারের মতো আয়োজিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার প্রধান ফটক করা হয়েছে মেট্রোরেলের আদলে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এই মেলার আয়োজন করেছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৯৯৫ সাল থেকে যৌথ উদ্যোগে মেলার আয়োজন করেছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে। তবে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় বাণিজ্য মেলা।
এবারের মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, নেপালসহ ১২টি দেশের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। মেলায় ১৭টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। মেলায় দেশ-বিদেশের মোট ৩৩১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। গতবার এই সংখ্যা ছিল ২২৫টি।
প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলবে বাণিজ্যমেলা। তবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে। এবারে মেলার প্রবেশ মূল্য প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্য ২০ টাকা। অনলাইনে ৫০ শতাংশ ডিসকাইন্টে মেলার টিকিট কেনা যাবে।
মেলায় যাতায়াত সুবিধার জন্য গতবারের মতো এবারো শাটল বাস সার্ভিস রয়েছে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে এক্সিবিশন সেন্টার পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে ৭০টি বিআরটিসি বাস চলাচল করবে। প্রয়োজনে এর সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ টাকা। মেলা চলাকালীন এসব বাস চলাচল করবে।
মাহফুজা ১-১-২০২৩