তীব্র তুষার ঝড়ে বিপর্যস্ত নিউইয়র্কসহ গোটা যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবল শক্তিশালী শীতকালীন ঝড়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৬০ জনে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি এ তথ্যটি জানিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, কানাডার কাছে গ্রেট লেক থেকে মেক্সিকান সীমান্তের রিও গ্র্যান্ডে পর্যন্ত বিস্তৃত এই ঝড়ের ফলে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত কমপক্ষে ৬০ জন মারা গেছে। এদের মধ্যে ২৮ জন নিউ ইয়র্কের পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দা। মঙ্গলবার পর্যন্ত এই এলাকায় ৯ ইঞ্চি তুষারপাত হতে পারে বলে আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানানো হয়।
নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বাফেলোতে মারা গেছে ২০ জন। এখানকার যানবাহনে ও তুষারের নিচে মৃতদেহগুলো পাওয়া গেছে। শুক্রবার তুষারঝড় শুরুর পর থেকে বাফেলোতে ৪ ফুটেরও বেশি তুষারপাত হয়েছে। ভারী তুষারপাত আর হিমশীতল বাতাসে বাফেলো চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এবং সড়কে বহু যানবাহন আটকা পড়েছে। এমকি জরুরি পরিষেবার গাড়ি ও অ্যাম্বুলেনস্ চলাচল করতে পারছে না। বাফেলো বিমানবন্দরের ৯০ শতাংশ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জরুরি তহবিল অনুমোদন করেছেন। তিনি টুইটারে লিখেন, ‘আমার হৃদয় তাদের সাথে যারা এই ছুটির সপ্তাহান্তে প্রিয়জনকে হারিয়েছে।’
স্থানীয় সময় গতকাল সকাল থেকে আজ মঙ্গলবার বেলা ১টা নাগাদ আরও ৮ থেকে ১৩ ইঞ্চি তুষারপাত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ঝড়ের কারণে বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শুরুতে ১৭ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় থাকলেও এরই মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা হয়েছে।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইট ফ্লাইট অ্যাওয়ার ডটকমের তথ্য অনুযায়ী সোমবার প্রায় চার হাজার মার্কিন ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
ভারমন্ট, ওহিও, মিসৌরি, উইসকনসিন, কানসাস এবং কলোরাডোতেও ঝড়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দক্ষিণ ফ্লোরিডার তাপমাত্রা এতটাই কমে গেছে যে, সেখানে তৃণভোজী প্রাণি ইগুয়ানা বরফে জমে গাছ থেকে পড়ে গেছে। পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা রাজ্যটি ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৪৫ ডিগ্রি নিচে নেমে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া বিভাগ (এনডব্লিউএস) জানিয়েছে, টেক্সাস থেকে মেইন পর্যন্ত ছড়ানো বিশাল এই ঝড়টির বিস্তৃতি ৩২০০ কিলোমিটার। এনডব্লিউএস বলছে, শুক্রবার বায়ুমণ্ডলের চাপ দ্রুত কমে গিয়ে ঝড়টি ‘বোম্ব সাইক্লোনের’ রূপ নেয়, এতে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্তে তুষার ঝড়ের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানার এলক পার্কের তাপমাত্রা নেমে মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছিল। মন্টানা অঙ্গরাজ্যের অবস্থা এতটাই হিমশীতল যে, বাতাসে গরম পানি ছুড়লে মুহূর্তেই সেটা তুষারে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। একই সময় মিশিগানের হেল শহর পুরোপুরি বরফের চাদরে ঢাকা ছিল। হেল শহরের তাপমাত্রা মাইনাস ১৭ সেলসিয়াসে নেমে যায়।
পেনসেলভেনিয়া ও মিশিগানে ভারি তুষারপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এছাড়াও লুইজিয়ানা, আলাব্যামা, ফ্লোরিডা ও জর্জিয়ায় তাপমাত্রা মাইনাস তিন সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যেতে পারে বলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
নিউ ইয়র্ক, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, কেনটাকি, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা ও ওকলাহোমায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। এছাড়াও উইসকনসিন ‘জ্বালানি জরুরি অবস্থা’ জারি করেছে।
এদিকে, ঝড়-সম্পর্কিত ব্যাপক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার ওহাইওতে ৫০টি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে অন্তত দুইজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। একই রাজ্যে শনিবার আলাদা দুর্ঘটনায় আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
একমাত্র অঞ্চল যা এই ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে তা হল ক্যালিফোর্নিয়া যেখানে মহাদেশীয় পর্বতমালা রাজ্যটিকে রক্ষা করতে সাহায্য করছে।
অন্যদিকে কানাডার অন্টারিও ও কুইবেক প্রদেশেও ঝড়ের তাণ্ডব দেখা গেছে। সেখানকার কয়েকলাখ মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। দেশটির বাকি অধিকাংশ অংশে, ব্রিটিশ কলম্বিয়া থেকে নিউফান্ডল্যান্ড পর্যন্ত, চরম শৈত্য প্রবাহ ও শীতকালীন ঝড়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তবে সেখানে এখনও পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
মাহফুজা ২৮-১২