শক্তিশালী তুষারঝড়ের কবলে আমেরিকার অন্তত ২০ কোটি মানুষ।এই তুষার ঝড়ে এখন পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বরফে ঢেকে গেছে বিভিন্ন ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সড়ক, নৌ ও ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা।
প্রবল তুষারঝড়ের কারণে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন অন্তত ১৫ লাখ মানুষ। শুক্রবার হাজার হাজার ফ্লাইট বাতিল করেছে এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষগুলো।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার দিনজুড়ে যে তুষারঝড় বয়ে গেছে— তার ব্যাপ্তি ছিল দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য টেক্সাস থেকে সর্বউত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য মাইন পর্যন্ত, অর্থাৎ ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটারেরও বেশি। এ ঝড়কে ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ বলে শুক্রবার এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে এনডব্লিউএস।
কানাডায় অন্টারিও ও কুইবেকও, কয়েক হাজার স্থাপনা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে । ব্রিটিশ কলাম্বিয়া থেকে নিউফাউন্ডল্যান্ড পর্যন্ত দেশের বেশিরভাগ অংশই প্রচণ্ড ঠান্ডা ও শীতকালীন ঝড়ের সতর্কতার অধীনে রয়েছে।
মার্কিন জাতীয় আবহাওয়া সেবা জানিয়েছে, দেশের কিছু অংশে চলতি সপ্তাহের শেষ নাগাদ মাইনাস ৪৫ থেকে মাইনাস ৭০ ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা নেমে যেতে পারে। এরই মধ্যে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে কয়েক রাজ্যে।
ইউএস ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (এনডব্লিউএস), বলছে, মন্টানা অঙ্গরাজ্যের এলক পার্কে তাপমাত্রা মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। মিশিগানের হেল শহর কয়েক ইঞ্চি তুষারে ঢেকে গেছে। শুক্রবার রাতে সেখানে তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।রাজ্যের অধিকাংশ এলাকা ঢেকে গেছে বরফের পুরু স্তরে। এছাড়া মিশিগান, বাফেলো, নিউইয়র্ক, সাউথ ডাকোটা, কলরাডো, কানসাস, ওয়াইওমিং, টেনেসি, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, কেন্টাকি, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওকলাহোমা রাজ্যে বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যে এখনও অব্যাহত আছে তুষারপাত এবং তাপমাত্রা ওঠানামা করছে মাইনাস ৩২ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৪২ ডিগ্রির মধ্যে।
কানসাস, টেনেসি ও ওয়াইওমিং অঙ্গরাজ্যের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, গত ২৬ বছরে এত নিম্ন তাপমাত্রা দেখা যায়নি। ঝড়ো হওয়া, তাপমাত্রা হ্রাস ও তুষারপাতের জেরে নিউইয়র্ক, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, কেন্টাকি, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা ইতোমধ্যে জরুরি অবস্থা জারি করেছে।
সেই সঙ্গে জ্বালানি সংকট যাওয়ায় আবহাওয়াগত জরুরি অবস্থা জারির পাশাপাশি জ্বালানিগত জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করেছে সাউথ ডাকোটা এবং উইসকনসিন।
এছাড়া ঝড়ের প্রভাবে দেশটির নিউ ইংল্যান্ড, নিউ ইয়র্ক এবং নিউজার্সির উপকূলীয় অনেক এলাকায় বন্যাও শুরু হয়েছে। দক্ষিণ ডাকোটা অঙ্গরাজ্য ব্যাপক তুষারঝড়ের কবলে পড়েছে বহু মানুষ।
সাউথ ডাকোটার রেড ইন্ডিয়ানদের অন্যতম নেতা ফ্র্যাঙ্ক স্টার বিবিসিকে বলেন, বৈরী আবহাওয়া ও ভারী তুষারপাতের কারণে বহুসংখ্যক লোকজন বাড়িতে গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন এবং তাদের এ পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে জ্বালানি সংকট।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়ার জানিয়েছে, শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে পাঁচ হাজার ৬০০ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে এবং আরও ৭ হাজার ৬০০টি বিলম্বিত হয়েছে। যেখানে ক্রিসমাস উপলক্ষে সবাই বাড়ি ফেরার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনগুলোতে অপেক্ষা করছেন।
মাহফুজা ২৪-১২