রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে যা যা দরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন চলাকালীন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানালেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা । তিনি বলেন ভোটের সময় প্রশাসনের কেউ হস্তক্ষেপ কিংবা প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা করলে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে বলেছি এবং কিছু ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাশেদা সুলতানা জানান এ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করতে প্রয়োজনমতো সর্বোচ্চ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্বে থাকবে । এ সময় তিনি ভোটারদের নির্ভয়ে কেন্দ্রে এসে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বানও জানান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর সরকারি কলেজের অডিটরিয়ামে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ সব কথা বলেন।
রাশেদা সুলতানা আরও বলেন, ভোট চলাকালীন ইভিএমে ভোটপ্রদান-সংক্রান্ত কাগজের মাধ্যমে লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদের দেখানো হবে কীভাবে ভোট দিতে হবে। ইতোমধ্যে পোলিং এজেন্ট, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, মক ভোটের আয়োজন, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ইভিএম নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন।
তিনি আরও বলেন, রসিক নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে। ভোট চলাকালীন ইভিএমে সমস্যা হলে এক্সপার্ট রয়েছে, তাৎক্ষণিক সমাধান করা হবে। নির্বাচনে যত ইভিএম দরকার তার থেকে দ্বিগুণ ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইভিএমে কারচুপির সুযোগ নেই। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।
এর আগে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ছয় দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা।
তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক নির্বাচনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম, মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার নুরে আলম মিনা, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (আইন অনুবিভাগ) এর যুগ্ম সচিব মাহবুবার রহমান সরকার, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-১ বিভাগের যুগ্ম সচিব (চলতি দায়িত্ব) শাহেদুন্নবী চৌধুরী, রংপুর জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জি. এম. সাহাতাব উদ্দিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব আবদুল বাতেন।
ইতোমধ্যে নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে নির্বাচন কমিশন। সবগুলো কেন্দ্রে ইভিএমে নির্বাচন হবে। ৩ হাজারের বেশি ইভিএম মেশিন চলে এসেছে।
ইভিএমের ব্যবহার কারিগরি বিষয় হওয়ায় ভোটারদের ইভিএমের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আগামী ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর মক ভোটিং অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে ভোটার শিখন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। শিখন কার্যক্রমে ভোটাররা ইভিএমে ভোটদান সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবে। এছাড়া নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে ১৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।
২৫ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে ২৮ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত মোটর সাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
১ হাজার ৩৪৯টি ভোট কক্ষে একটি করে সিসি ক্যামেরা এবং ২৩০টি কেন্দ্রে প্রতিটি কেন্দ্রে ২টি করে সিসি ক্যামেরাসহ মোট ১ হাজার ৮’শ সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ প্রায় শেষের পথে। এছাড়া ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, সহকারি প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং অফিসারদের ইভিএম বিষয়ে দুইদিনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নির্বাচনের জন্য ব্যবহৃত ইভিএম নির্বাচন ভবনে রাখা হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অথবা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মনোনীত ব্যক্তিরা ইভিএম কাস্টমাইজেশন সেন্টারে উপস্থিত হয়ে কাস্টমাইজেশনের বিভিন্ন দিক অবলোকন করতে পারবে এমন ব্যবস্থাও করা হয়েছে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন প্রশিক্ষিত দুইজন কর্মকর্তা/কর্মচারী কারিগরি সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি ভোট গ্রহণের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
ভোট গ্রহণের আগের দিন ২৬ ডিসেম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নামের বিপরীতে ব্যালট ইউনিটে প্রতীক সন্নিবেশিত রয়েছে কিনা তা ভোট কেন্দ্রে পৌছে প্রিজাইডিং অফিসার যাচাই করবেন।
তৃতীয়বারের মতো তৃতীয় বৃহত্তম এই সিটি নির্বাচনে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ মেয়র পদে ৯ জন প্রার্থী ও ৩৩টি ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর (মহিলা) পদে ৬৭ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৭৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন।
আগামী ২৭ ডিসেম্বর রসিকে ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন । এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন এবং মহিলা ২ লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন। এদিন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ২২৯টি কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে।
মাহফুজা ২২-১২