ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলের অবস্থা সংকটাপন্ন। কোমোথেরাপিতেও সাড়া দিচ্ছেন না তিনি এবং তাকে প্যালিয়েটিভ কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়েছে। গেল সপ্তাহে আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করা ৮২ বছর বয়সী পেলেকে ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন রোগীকে তখনই প্যালিয়েটিভ কেয়ারে নেওয়া হয় যখন যখন তার রোগ নিরাময় অযোগ্য কিন্তু তার চিকিৎসা করা হবে। সেই সময়ে মূলত তাকে শারীরিক ও মানসিক, আত্মিক ও সামাজিকভাবে সাপোর্ট দেয়া হয়।
পরিস্থিতি এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যে, বলা হচ্ছে তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। গোল ডটকম লিখেছে, ‘মোভড টু অ্যান্ড অব লাইফ কেয়ার ইন হসপিটাল।’ এই এক শিরোনামেই বোঝা যাচ্ছে- একেবারে শেষ মুহূর্তে পৌঁছে গেছেন সর্বোচ্চ তিনটি বিশ্বকাপজয়ী এই ফুটবলার।
একদিন আগেই টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামে নিজেই মেসেজ লিখেছিলেন। ভক্তদের আশ্বস্ত করে লিখেছেন, তার অবস্থা ভালো। ক্রিটিক্যাল বলার মতো অবস্থায় এখন আর নেই
শনিবার ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যম ফোলহা ডি সাও পাওলো এক প্রতিবেদনে জানায়, যে থেরাপি নেওয়ার মাধ্যমে এতোদিন তিনি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন সেই কেমোথেরাপিতে আর সাড়া দিচ্ছেন না পেলে ।সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তির পর আজ তার অবস্থা মারাত্মক সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে এবং পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত।
গত মঙ্গলবার হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা ও শরীর ফুলে যাওয়ায় সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৮২ বছর বয়সী পেলেকে। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী মার্সিয়া আওকি এবং একজন পরিচারিকা। এরপর থেকে সেখানেই রয়েছেন তিনি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এর আগে বিভিন্ন কারণে পেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও শরীর ফুলে যাওয়ার ঘটনা এই প্রথম হয়েছে।
গেল মঙ্গলবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর কাতারের একটি ভবনে পেলের সুস্থতা কামনা করে বড় করে লেখা হয় ‘দ্রুত সেরে উঠুন।’
শুক্রবার রাতেই কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে যখন ব্রাজিল ক্যামেরুনের বিপক্ষে মাঠে নামে, তখন সেখানে ব্রাজিল সমর্থকরা পেলেকে স্মরণ করে তার বিশাল প্রতিকৃতি সম্বলিত পতাকা এবং তার জার্সি প্রদর্শন করেন। তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন তারা।
পেলের সুস্থতা কামনায় টুইট করেছেন ফ্রান্স ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপেও। তিনি ব্রাজিলের পতাকা দিয়ে টুইট করে লেখেন, ‘প্রে ফর দ্য কিং।’
দীর্ঘদিন ধরে মলাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত পেলে। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে কোলনে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল; কিন্তু তাতে সমস্যার সমাধান হয়নি। এরপর থেকে কেমোথেরাপি চলছিল পেলের। সেটাই আর নিতে পারছেন না তিনি।
বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে ২০১০ সালে কাতারের নাম ঘোষণার পরই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন পেলে। ইচ্ছে ছিল ১৮ ডিসেম্বর দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামে বসে ব্রাজিলের ষষ্ঠবার বিশ্বকাপ জয় দেখবেন। কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে কাতার যাওয়ার অনুমতি দেননি। তিনি ব্রাজিলে নিজের বাড়িতেই ছিলেনএবং সেখানেই আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন
১৯৫৮ বিশ্বকাপে ১৭ বছর বয়সে পেলে বিশ্বমঞ্চে নিজের আবির্ভাবের জানান দেন। এরপর বিশ্বের একমাত্র ফুটবলার হিসেবে টানা তিন বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেন।
ইনজুরির কারণে ১৯৬২ ও ১৯৬৬ বিশ্বকাপে খুব বেশি অবদান রাখতে না পারলেও ১৯৭০ বিশ্বকাপে দারুণ অবদান রাখেন। ব্রাজিলের হয়ে ৯২ ম্যাচ খেলে সর্বোচ্চ ৭৭ গোল করেন তিনি। হয়ে যান ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা। পেলে তাঁর ক্যারিয়ারে ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ৮৩১ ম্যাচ খেলে গোল করেন ৭৫৭টি।
মাহফুজা ৩-১২