কলকাতায় বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী নুর উর লতিফ নবি ওরফে সরওয়ার ম্যাক্সনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানায় দক্ষিণ কলকাতার হরিদেবপুর এলাকায় গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন ম্যাক্সন। তার সঙ্গে থাকতেন তার লিভ-ইন পার্টনার অর্পিতা হাজরা নামে এক নারী।
মঙ্গলবার রাতে হরিদেবপুর থানার অন্তর্গত ১৬৪ নাম্বার মতিলাল গুপ্ত রোডের একটি বহুতল ভবন থেকে তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়।এরপর রাতে কলকাতার সুপার স্পেশালিস্ট হসপিটালে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। বুধবার স্থানীয় ফরিদপুর থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যার কেস নাম্বার১৪১/২২।
মতিলাল গুপ্তা রোডের ওই বহুতল ভবনের তিন তলা একটি বাসা ভাড়া নিয়ে অর্পিতা হাজরা নামের এক নারীর সঙ্গে থাকতেন ম্যাক্সন।মাদকে আসক্ত ছিলেন তিনি।বেশ কিছুদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন।
তার বান্ধবী অর্পিতা উত্তর চব্বিশ পরগনার জেলার বরানগরের একটি শপিংমলে কাজ করতেন এবং তাদের দুই জনের মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকতো।
মঙ্গলবার রাত ৮টা ৪৮ মিনিটে কাজ শেষে সে হরিদেবপুরের বহুতল ভবনে পৌঁছান।ভেতর থেকে কোনো সাড়া না মেলায় অর্পিতা স্থানীয়দের সহায়তায় ওই দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। ঢুকই দেখতে পান ফ্যানের পাখার সঙ্গে গলায় ওড়না দিয়ে ঝুলছেন ম্যাক্সন।
রাত ১০টায় গুরুদেবপুর থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর দেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী নামের ওই বহুতলের ভবনের এক বাসিন্দা।
এরপর ঘটনাস্থলে পৌঁছাছে হরিদেবপুর থানার পুলিশ ম্যাক্সনের নিথর দেহ উদ্ধার করে কলকাতার সুপার স্পেশালিস্ট এম আর বাঙুরে হাসপাতাল নিয়ে আসে। পরে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
কলকাতার এম আর বাঙুরে হাসপাতালের সুপার ডাক্তার শিশির নস্কর জানান, তাকে থানার পুলিশ মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেএবং মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।খুন না আত্মহত্যা সেই নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে এলে ছবি পরিষ্কার হবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
নুর-উন লতিফ নবী, ওরফে ম্যাক্সন নামে এই ব্যক্তি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার চাঁদগাও থানার এলাকার মোহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার পিতার নাম আব্দুল লতিফ চৌধুরী।
এ বছরে ৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতা সংলগ্ন ডানলপ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।ফেব্রুয়ারি মাসে ম্যাক্সনকে পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতের তোলা হয়। প্রথমে বিচারক১০ দিন রিমান্ডের নির্দেশ দেয়। এরপর বেশ কয়েকবার দফায় দফায় পুলিশের রিমান্ড এবং বিচার বিভাগীয় হেফাজতে নেওয়া হয় ম্যাক্সনকে। তমাল চৌধুরী পরিচয় দিয়ে ভুয়া আইডি কার্ড ও পাসপোর্ট বানিয়েছিল সে। বছর দেড়েক ধরে ডানলপের নর্দান পার্ক এলাকায় এক নারী সঙ্গে থাকছিল এই জঙ্গি। তার বিরুদ্ধে ১৪ ফরেনার্স অ্যাক্ট, জালিয়াতি, প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের কেস রুজু হয়। কারাগারেই ছিল এই অভিযুক্ত। তার বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা পড়ে আদালতে।
৮ এপ্রিল জামিনে মুক্তি পায় সে।জামিন পেয়েই গা ঢাকা দিয়েছিল এই অভিযুক্ত এরপর থেকেই হরিদেবপুরের এই বহুতল ভবনের একটি রুমে তার বান্ধবী অর্পিতার সঙ্গে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে ।
ম্যাক্সনকে গ্রেপ্তারের পর সিআইডি সূত্রে জানানো হয়, বাংলাদেশে ফোন করে সেখান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করত সে। চট্টগ্রামে এখনো সক্রিয় রয়েছে সন্ত্রাসীর শাগরেদরা। সে নিজেও চট্টগ্রামের লোক। শাগরেদরাই টাকা তুলত পরে সেই টাকা হাওলা/হুন্ডির মাধ্যমে কলকাতায় পাঠাত। বাংলাদেশ পুলিশ সূত্রে খবর তার বিরুদ্ধে খুন, চাঁদাবাজিসহ মোট ২৪টি মামলা রয়েছে। সে কারণেই তাকে জেরা করার উদ্যোগ নেয় র্যাব। কিন্তু বাংলাদেশের তদন্তকারী দল কলকাতায় পৌঁছানোর আগেই অস্বাভাবিকভাবে জামিন পেয়ে যায় এই অপরাধী।
২০২১ সালে লকডাউনের সময় কলকাতায় আসে ম্যাক্সন। নাম বদলে হয়ে যায় তমাল চৌধুরী। থাকছিল কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকায়। পরে নিউ মার্কেট এলাকায় মাছের ব্যবসাও শুরু করে। এসময় উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বরানগর এলাকার এক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তার সঙ্গেই ৬ হাজার রুপিতে নর্দান পার্কে বাড়ি ভাড়া নিয়ে লিভ-ইন রিলেশনে ছিল ম্যাক্সন।
মাহফুজা ১-১২