সুইজারল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে ‘জি’ গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করে নিয়েছে ৫ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। টানা দুই ম্যাচ জিতে ব্রাজিলের পয়েন্ট ৬। সুইজারল্যান্ড এক ম্যাচ জিতে পয়েন্ট ৩।
একটি গোল সেমি অটোমেটেড অফসাইড টেকনোলজিতে বাতিল করে দেওয়া হলো। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত সেই গোল এলো ৮৩তম মিনিটে। ম্যাচের মাত্র ৭ মিনিট বাকি থাকতে, ক্যাসেমিরোর পা থেকে।
সার্বিয়া এবং ক্যামেরুন ড্র করে দুই ম্যাচে পেয়েছে ১টি করে পয়েন্ট। শেষ ম্যাচে যদি ব্রাজিল হেরেও যায় তবুও তাদের পয়েন্ট হবে সর্বোচ্চ ৪ করে। সুতরাং, অন্তত ব্রাজিলকে পেছনে ফেলার আর সম্ভাবনা নেই।
ইনজুরির কারণে নেইমার খেলতে পারেননি এবং ছিলেন না ডিফেন্ডার দানিলোও। নেইমারহীন ব্রাজিল কেমন করে সেটাই ছিল দেখার। । বিশ্বকাপে ইউরোপের এই দেশটিকে কখনো হারাতে পারেনি সেলেসাওরা। গত বিশ্বকাপেও গ্রুপ পর্বে সুইসদের সঙ্গে ড্র করেছিল ব্রাজিল।১৯৫০ ও ২০১৮ সালে যথাক্রমে ড্র হয়েছে ২-২ ও ১-১ এ। গোড়ালির চোটে ছিটকে যাওয়া নেইমারবিহীন ব্রাজিলই সেই খরা কাটালো। নেইমার না থাকায় ছিল দুশ্চিন্তা। সেটি খুব একটা বুঝতে দেননি ভিনিসিউসরা।
স্টেডিয়াম ৯৭৪ এ- প্রথমার্ধে ব্রাজিলকে খুব একটা ভালো মনে হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে খেলেছে ব্রাজিল ‘ব্রাজিলের’ মতোই। বিশেষ করে রদ্রিগো, অ্যান্টোনি, গ্যব্রিয়েল হেসুসদের মাঠে নামানোর পর ব্রাজিলের খেলার ধরনটাই যেন পাল্টে যায়।
আগে থেকেই বারবার ভিনিসিয়ুস জুনিয়র বল নিয়ে সুইজারল্যান্ডের বক্সের মধ্যে প্রবেশ করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু রিচার্লিসনের ফিনিশিংটা আজ ভালো না হওয়ায় গোলও আসছিল না। আগের ম্যাচের রিচার্লিসনকে আজ খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল। বরং, দুই উইংয়ে রাফিনহা এবং ভিনিসিয়ুস বারবার সুইসদের রক্ষণ ভাঙার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ব্যর্থ হন তারা। গোল আদায় করতে পারছিলেন না।
ম্যাচের ২৭ মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েছিল ব্রাজিল। এ সময় ডানদিক থেকে ক্রসে ভিনিসিউস জুনিয়রকে বল বাড়িয়ে দেন রাফিনহা। ভিনিসিউস বক্সের মধ্যে পা লাগিয়ে গোলপোস্টের দিকে পাঠান। কিন্তু সেটি কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন সুইস গোলরক্ষক সোমার।
যে কারণে প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য। দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর ১৫ মিনিট পর, ম্যাচের ৬০তম মিনিটে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র অসাধারণ একটি গোল করলেও রিচার্লিস অফসাইড ছিলেন। ভিএআরের মাধ্যমে সেই গোল বাতিল করে দেয়া হয়।
সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমার্ধে একাধিক আক্রমণ শানিয়েও গোল পায়নি ব্রাজিল। তাতে গোলশূন্যভাবে শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা। অবশ্য প্রথমার্ধের ৫৫ শতাংশ বলের দখল ছিল সেলেসাঁওদের কাছে। তারা গোলপোস্টের দিকে শটও নিয়েছিল ৬টি। তার মধ্যে তিনটি ছিল অন টার্গেটে। বিশেষ করে ভিনিসিউস জুনিয়র ও রাফিনহার নেওয়া অন টার্গেটের শট রুখে দেন সুইজারল্যান্ডের গোলরক্ষক সোমার।
বিরতির পর ৫৭ মিনিটে ব্রাজিলের সহজ সুযোগ মিস। ভিনিসিয়াস বাঁ দিক আলতো শটে সুইজারল্যান্ডের গোলমুখে তুলে দিয়েছিলেন। দৌড়ে এসে ডাইভ দিয়েছিলেন রিচার্লিসন। কিন্তু পায়ে বল লাগেনি। হালকা লাগলেই বল জড়াতো জালে।
অবশেষে ৮৩ মিনিটে আসে গোল। ডি বক্সের কোনায় বল পেয়েই আলতো পায়ে বাঁ দিকে দাঁড়ানো ক্যাসিমিরোর দিকে দিয়ে দেন ভিনিসিউস। বল পেয়েই জোরালো শটে ক্যাসিমিরো জড়িয়ে দেন জালে। সুইস গোলরক্ষক বুঝতেই পারেননি। শেষ পর্যন্ত এই গোলেই মুখে চওড়া হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল।
প্রথমার্ধে খুব একটা না হলেও দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিলের মুহুর্মুহু আক্রমণে বিপর্যস্ত ছিল সুইসরা। বারবার রাফিনহাদের আক্রমণ নষ্ট হচ্ছিল সুইস ডিফেন্সে। রিচার্লিসন দুটি সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন। দুটিই পাস দিয়েছিলেন ভিনিসিউস। পরে রিচার্লিসনকে তুলে জেসুসকে নামান ব্রাজিল কোচ তিতে। শেষ দিকে তার একটি আক্রমণ রুখে দেন সুইস গোলরক্ষক। আরেকবার রিচার্লিসনের মতো একই মিস করেন ভিনিসিউস। তবে তিনি বাঁ দিকে খেলেছেন দুর্দান্ত।
ম্যাচে ১৮টি শট নেয় ব্রাজিল। ৫টি ছিল অন টার্গেট। অন্যদিকে সুইসরা লক্ষ্যহীন ৫টি শট নেয়। ম্যাচের পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে প্রাধান্য বিস্তার করেই খেলেছে ব্রাজিল। ৫৪ ভাগ বল ছিল তাদের দখলে। ৪৬ ভাগ ছিল সুইজারল্যান্ডের দখলে।
ম্যাচের প্রথম থেকেই প্রাধান্য বিস্তার করে খেলছিলো ব্রাজিল। অথচ, প্রথমার্ধে একের পর এক আক্রমণ করেও সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে গোল বের করতে পারেনি ব্রাজিল।
৮৩তম মিনিটে এলো সেই কাঙ্খিত গোল। ৮৭তম মিনিটে ছোট বক্সের সামনে থেকে রদ্রিগোর একটি শট পাঞ্চ করে ঠেকিয়ে দেন সুইজারল্যান্ড গোলরক্ষক সমার। এরপরও গ্যাব্রিয়েল হেসুস, রদ্রিগো এবং অ্যান্টোনি বেশ কয়েকটি দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি।
জি’ গ্রুপ থেকে প্রথম দল হিসেবে ২ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৬ পয়েন্ট নিয়ে নকআউট পর্বে যায় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। সমান ম্যাচে ৩ পয়েন্ট সুইসদের। ১টি করে পয়েন্ট ক্যামেরুন ও সার্বিয়ার। ব্রাজিলের শেষ ম্যাচ ক্যামেরুনের বিপক্ষে ২ ডিসেম্বর রাত ১টায়।
মাহফুজা ২৯-১১