আজ কর্ণাটকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরায় নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে রায় ঘোষণা করবে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় এর রায় দেবেন ।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে কর্ণাটক হাইকোর্ট রায় দেয়ার পর এ মামলাটি ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছায়। ২২ সেপ্টেম্বর বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তা এবং সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ ১০ম দিনের মতো যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে রায় ঘোষণা স্থগিত করেন । বেঞ্চের নেতৃত্বে থাকা বিচারপতি গুপ্তা ১৬ অক্টোবর অবসরে যাচ্ছেন এবং এ সপ্তাহেই মামলাটির রায় ঘোষণা হতে পারে।
আবেদনকারীদের পক্ষে উপস্থিত আইনজীবীরা বলেন, মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরতে বাধা দিলে তাদের শিক্ষাজীবনকে বিপন্ন হবে এবং তারা ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করে দিতে পারে। কর্ণাটকে রাজ্য সরকারের এ আদেশ স্কুল-কলেজগুলোতে সাম্য, অখণ্ডতা ও জনশৃঙ্খলাকে বিঘ্নিত করেছে। হিন্দুদের পরিধান করা ঘুনঘাট ও টিপ এবং শিখদের পাগড়ির এগুলো পরে ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যাওয়ার বিষয়ে কোনো বিধিনিষেধ নেই।তাহলে মুসলিমরা কেন হিজাব পড়তে পারবেনা বলে যুক্তি উত্থাপন করেন আইনজীবীরা।
রাজ্য সরকারের পক্ষে উপস্থিত আইনজীবীরা দাবি করেন, কর্ণাটক সরকারের যে আদেশ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে তা ‘ধর্ম নিরপেক্ষ’।
এ বছরের ১ জানুয়ারি কর্ণাটকের উদুপির একটি কলেজে কয়েকজন হিজাব পরা শিক্ষার্থীকে ক্লাসে বসতে বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটে। কলেজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি রঘুপতি ভাট জানিয়ে দেন, হিজাব পরা শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ঢুকতে পারবেন না।
রাজ্যজুড়ে সেই বিতর্ক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। হিজাবের পাল্টা হিসেবে গেরুয়া উত্তরীয় পরে আন্দোলন শুরু করে একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। কয়েক জায়গায় হিজাবের পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলনকারীদের এবং পুলিশের সঙ্গেও একাধিক সংঘর্ষ হয়। কয়েকটি জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় রাজ্যের সব স্কুল-কলেজ।
২৬ জানুয়ারি কর্ণাটক সরকার এ বিষয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে। ঘোষণা করা হয়, কমিটি নির্দিষ্ট সুপারিশ করার আগ পর্যন্ত ছাত্রীরা কেবল ইউনিফর্ম পরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারবে। হিজাব বা গেরুয়া উত্তরীয় কিছুই পরার অনুমতি নেই। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উদুপির কয়েকজন ছাত্রী কর্ণাটক হাইকোর্টে রিট করেন। তারা আদালতে দাবি করেন, হিজাব পরা তাদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। কোনোভাবেই তা বাতিল করা যাবে না।
১০ ফেব্রুয়ারি কর্ণাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রিতুরাজ অবস্তি, বিচারপতি কেএস দীক্ষিত এবং বিচারপতি জেএম খাজি অন্তর্বর্তী রায়ে বলেন, রায় ঘোষনা না হওয়া পর্যন্ত কর্ণাটকে স্কুল-কলেজ খুললেও কোনো শিক্ষার্থী ধর্মীয় প্রতীকসম্বলিত কোনো পোশাক পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে পারবে না।
হিজাব পরা ইসলামের বাধ্যতামূলক অনুশীলনের মধ্যে পড়ে না এ মর্মে গেল ১৫ মার্চ কর্ণাটক হাইকোর্টও রাজ্য সরকারের পক্ষেই রায় দেন। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন ভুক্তভোগীরা।
মাহফুজা ১৩-১১