বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ সারা দেশের ২৩১টি চা বাগানে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলছে। উদ্যোক্তারা আশঙ্কা করছেন চা শ্রমিকদের এ আন্দোলনের ফলে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার চা শিল্পের বাজার ঝুঁকিতে পড়বে । মঙ্গলবার ১৬ আগস্ট বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশে বর্তমানে ১৬৮টি বাণিজ্যিক চা বাগানে দেড় লাখেরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের ৩ শতাংশ চা উৎপাদন করে এবং জিডিপিতে চা শিল্পের অবদান প্রায় ১ শতাংশ। বাগান মালিকরা জানান, আন্দোলনের কারণে সিলেট ও চট্টগ্রামের ১৬৮ চা বাগানে থেকে প্রতিদিন ২০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যমানের চা পাতা নষ্ট হচ্ছে ।
চা শ্রমিকরা দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরি হলেও বর্তমানে একজন শ্রমিক দৈনিক প্রায় ৪০০ টাকা সমপরিমাণ সুবিধা পেয়ে থাকেন। দৈনিক নগদ মজুরি ছাড়াও ওভারটাইম, বার্ষিক ছুটি ভাতা, উৎসব ছুটি ভাতা, অসুস্থজনিত ছুটি ভাতা, ভবিষ্যৎ তহবিল ভাতা, কাজে উপস্থিতি ভাতা, ভবিষ্যৎ তহবিলের ওপর প্রশাসনিক ভাতা মিলিয়ে সর্বমোট গড়ে দৈনিক মজুরির প্রায় দ্বিগুণ নগদ টাকা দেয়া হয় বলে জানায় বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন।
উদ্যোক্তারা বলেন, শ্রমিকদের সামাজিক উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিদিন ১৭৫ টাকার বিভিন্ন রকম সুবিধা দেয়া হয়।
খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভর্তুকির মাধ্যমে ২ টাকা কেজি দরে শ্রমিকদেরকে প্রতি মাসে প্রতি ৪২.৪৬ কেজি চাল অথবা গম রেশন দেওয়া হয়। একজন শ্রমিকের বসতবাড়ির জন্য পরিবার প্রতি ১ হাজার ৫৫১ স্কয়ার ফিট করে বাড়িসহ সর্বমোট ৫ হাজার ৮০০ বিঘা জায়গা দেয়া হয়েছে। শ্রমিকদের স্বাস্থ সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হাসপাতালে ৭২১ শয্যার ব্যবস্থা, ১৫৫টি ডিসপেনসারসহ মোট ৮৯১ জন মেডিকেল স্টাফ নিয়োজিত আছেন।
শ্রমিকদের সন্তানদের সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রাথমিক, জুনিয়র ও উচ্চ বিদ্যালয় মিলিয়ে মোট ৭৬৮টি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। ৪৪ হাজার ১৭১ জন শিক্ষার্থী বিনামূল্যে পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে্।
১৯০ বছরের পুরোনো শিল্প হিসেবে বাংলাদেশের অন্যান্য যেকোনো শিল্পের তুলনায় অনেক আগে থেকেই শ্রমিক আইন অনুসরণ করা হচ্ছে প্রতিটি চা বাগানে। মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য নিশ্চিতে ১৬ সপ্তাহের মজুরিসহ মাতৃত্বকালীন ছুটির পাচ্ছেন নারী শ্রমিকরা।
এছাড়া, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকের ভাতা, বিভিন্ন রকম শ্রমিক কল্যাণ কর্মসূচি যেমন: বিশুদ্ধ খাবার পানি, ম্যালেরিয়া প্রতিষেধক, স্বাস্থসম্মত টয়লেট, পূজা, বিনোদন প্রভৃতি কর্মকাণ্ডে সামগ্রিক আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়ে থাকে। তাছাড়াও, চা শ্রমিকের অবসরের পর তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা চাকরিতে নিয়োগ পেয়ে থাকে, যা একজন চা শ্রমিকের চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকে।
২০১২ সাল থেকে গেল ১০ বছরে চায়ের নিলাম মূল্যের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে শুন্য দশমিক ১৬ হারে বৃদ্ধি পেলেও চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হয়েছে ৯৪.২০ শতাংশ।
এমআরএস ১৭-৮