ষষ্ঠবারের মত শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। এখেন প্রশ্ন হলো কে এই রনিল বিক্রমাসিংহে যিনি ষষ্ঠবার প্রধানমন্ত্রী হলেন। এই ভয়াবহ সংকটের সময় তাকে দায়িত্ব দিয়েছে রাষ্ট্রপতি। আর তিনি নিয়েছেন। বলতে গেলে রাজনৈতিক পরিবারেরই জন্ম রনিল বিক্রমাসিংহের। তার চাচা জুনিস জয়াবর্ধনে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ছিলেন এক দশকের বেশি সময় । সত্তরের দশকের মাঝামাঝিতে রাজনীতিতে আসেন তিনি। ১৯৭৭ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় প্রেসিডেন্ট ছিলেন জুনিস জয়াবর্ধনে। ওই সরকারেই সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হন তিনি।
রনিল বিক্রমাসিংহে একবার এএফপিকে জানিয়েছিলেন, তিনি সম্ভবত একজন সাংবাদিক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারতেন। যদি সেদিনের সরকার ১৯৭৩ সালে তার পরিবারের সংবাদপত্রের ব্যবসাকে জাতীয়করণ না করতো।
শ্রীলঙ্কায় কয়েক দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধের সময় তামিল টাইগার গেরিলাদের বোমা হামলায় নিহত হন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রানাসিংহে প্রেমাদাসা। এরপর ১৯৯৩ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন বিক্রমাসিংহে।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হন বিক্রমাসিংহে। সে সময় তার বাল্যবন্ধু দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অর্জুনা মাহেন্দ্রানের বিরুদ্ধে শত শত কোটি ডলার অনিয়মের ঘটনা প্রকাশিত হয়।
রনিল বিক্রমাসিংহেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করার খবরকে বেশিরভাগই অবিশ্বাস্য এবং হতাশাজনক বলে মনে করছেন। বিক্রমেসিংহে একসময় রাজনীতিতে চতুর খেলোয়াড় ছিলেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে তার প্রতি জনসমর্থন দ্রুত কমেছে।
এএফপি জানায়, এর আগে ৫ বার প্রধানমন্ত্রী হলেও কোনোবারই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি রনিল বিক্রমাসিংহে। চলতি সপ্তাহ শুরু হওয়ার আগেও মনে করা হচ্ছিল, ৭৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদের ক্যারিয়ার শেষ পর্যায়ে। তবে এর পরেই তিনি একটি ঐকমত্যের প্রশাসন পরিচালনা করতে এবং দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপদেশটিকে পঙ্গু অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করতে সম্মত হন।
রনিল বিক্রমাসিংহের নিয়োগের পরপই লেখক ও সাংবাদিক অ্যান্ড্রু ফিডেল ফার্নান্ডো এক টুইট বার্তায় বলেন, এই পদক্ষেপ ‘আমাদের দেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পচনের পরিচয়।’
একসময় ক্ষমতাসীন তার ইউনাইটেড ন্যাশানাল পার্টি গত নির্বাচনে মাত্র একটি সংসদীয় আসন পেতে সক্ষম হয়েছে। ফলে সংসদে তিনিই একমাত্র তার দলের প্রতিনিধি। তার রাজনৈতিক ভরাডুবির অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয় বিরোধীদলের সদস্য হবার পরেও রাজাপাকশা পরিবারের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা।অনেকে মনে করেন রাজাপাকশা ভাইরা যখন ২০১৫ এর নির্বাচনে ক্ষমতা হারান তখন বিক্রমেসিংহে তাদের আড়ালে থাকতে সাহায্য করেছিলেন। এখন আবার প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ করাকে দেখা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকশার পদত্যাগের যে দাবিতে জনগণ তাকে অগ্রাহ্য করে সেটা ঠেকিয়ে রাখার একটা প্রচেষ্টা হিসাবে। অনেকেই মনে করছেন গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জনসাধারণ যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছে এই নিয়োগ তা বন্ধ করতে উদ্ধত একটা জবাব।
সূত্র: এএফপি, বিবিসি, ডেইলি মিরর