২৫শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১০ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

    সর্বশেষ খবর

    আমরা শ্রীলংকা-পাকিস্তানের মতো দুর্বল দেশের সঙ্গে তুলনা করতে চাই না, ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে তুলনা করতে চাই

    আমাদের মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে- কোনো ঋণ নেওয়া হয়নি। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা অর্থনৈতিক সমীক্ষার মাধ্যমে আমরা অন্যান্য মেগাপ্রকল্পগুলো গ্রহণ করেছি। ‘আর শুধু ঋণ নয়, বিদেশি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তিবায়িত হলে আমাদের অর্থনীতির চেহারা বদলে যাবে। আমরা দেশি-বিদেশি ঋণ নিচ্ছি। তবে তা যাতে বোঝা হয়ে না উঠে সেদিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সম্পদ বৃদ্ধি এবং মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করা।’

    বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ভাষণের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে পবিত্র রমজানের মোবারকবাদ এবং বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।

    উল্লেখ্য, বিদেশি ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দেউলিয়ার পথে রয়েছে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকা। নানা মেগা প্রকল্পের জন্য নেওয়া বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে দেশটি। দুই বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে কঠিন আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে দেশটি। নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো কিছুই আমদানি করতে পারছে না। কারণ এই রিজার্ভ দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব নয়। তাছাড়া চলতি বছর যে কিস্তি পরিশোধ করতে হবে, সে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রাও নেই শ্রীলংকার।

    শ্রীলংকার এই অবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা দিচ্ছেন অনেকে। রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদসহ নানা পেশার মানুষ নানা মন্তব্য করে চলেছেন। বলছেন, বাংলাদেশেরও শ্রীলংকার মতো পরিণতি হবে।

    তাদের এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল তার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে নানারকম কথা যারা লিখছে। আমি আবারও বলছি- ওই পত্রিকার লেখা পড়ে আমি রাষ্ট্র চালাই না। এখন তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে। বাংলাদেশ শ্রীলংকা হয়ে যাচ্ছে- এ রকম একটা কথা রটাচ্ছে।সম্প্রতি জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের শ্রীলংকার পরিণতি হওয়ার কোনো কারণ নেই। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবিও একই মূল্যায়ন করে বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী।

    এর আগে গত ৬ এপ্রিল একাদশ জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিরোধীদলীয় উপনেতা (জিএম কাদের) শ্রীলংকার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এটা বাস্তব। তবে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত উন্নয়নে যত ঋণ নিয়েছে, সব ঋণ সময়মতো পরিশোধ করা হয়। বাংলাদেশ ঋণ পরিশোধে কখনো খেলাপি (ডিফল্টার) হয়নি, হবেও না। সেদিক থেকে আমাদের অর্থনীতির ভিত্তি অনেক মজবুত। সেটা আমি বলে রাখতে চাই। আমরা অত্যন্ত সতর্ক।’

    দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল (১২ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মুখ্য সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে, তাতে আমরা শ্রীলংকা-পাকিস্তানের মতো দুর্বল দেশের সঙ্গে তুলনা করতে চাই না। ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে তুলনা করতে চাই।’

    ভাষণে দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহামারি শুধু বাংলাদেশেই নয়- সারা বিশ্বের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। মহামারিজনিত ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য আমার সরকার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমরা ২৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। এতে প্রায় ৬ কোটি ৭৪ লাখ মানুষ উপকৃত হয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার।’

    তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে পণ্য পরিবহণেও ভাড়া ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে আমাদের দেশেও কিছু কিছু পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা কিন্তু চুপচাপ বসে নেই। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে স্বস্তি নিয়ে আসার।’

    দেশের অর্থনীতি প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২২ এবং ২০২৩ হবে বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলক বছর। আর কয়েক মাস পরেই চালু হতে যাচ্ছে বহুল আকাঙ্ষিঅবত পদ্মা সেতু। এই সেতু জিডিপিতে ১.২ শতাংশ হারে অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

    উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে সরকারপ্রধান বলেন, এ বছরের শেষ নাগাদ নাগাদ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে মেট্রোরেল চালু হবে। আশা করা যায়, মেট্রোরেল রাজধানী ঢাকার পরিবহণ ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আগামী অক্টোবর মাসে চট্টগ্রামে কর্ণফুলির নদীর তলদেশ দিয়ে চালু হবে দেশের প্রথম টানেল। এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিট আগামি বছরের শেষ নাগাদ চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। গত মাসে পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্ধারিত সময়ের আগেই উদ্বোধন করা হয়েছে। অন্যান্য মেগাপ্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

    তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিগত ১৩ বছরে যে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েছে তা অর্থনীতির সামষ্টিক সূচকগুলো বিবেচনা করলেই স্পষ্ট হয়। ২০০৯ সালে জিডিপির আকার ছিল মাত্র ১০২ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে তা ৪১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু আয় ৭০২ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ২ হাজার ৫৯১ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ভাবনা এবং দূরদৃষ্টি-সম্পন্ন অর্থনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে। গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রেখে মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার ফলেই আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে।

    ‘তবে আমি মনে করি দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করা সরকারের দায়িত্ব। জাতির পিতা যে সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখতেন তা বাস্তবায়ন করতে অবদান রাখতে পেরেছি বলে আমরা গর্বিত। যতদিন বেঁচে আছি, মহান রাব্বুল আলামিন আমাকে কাজ করার সামর্থ্য দেবেন, ততদিন মানুষের জন্য কাজ করে যাব, জনগণের সেবা করে যাব।’

    কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে চাই:

    জীবনের এই পথ, কে বলিতে পারে

    বাকি আছে কত?

    মাঝে কত বিঘ্ন শোক, কত ক্ষুরধারে

    হৃদয়ের ক্ষত?

    পুনর্বার কালি হতে চলিব সে তপ্ত পথে,

    ক্ষমা করো আজিকার মতো

    পুরাতন বরষের সঙ্গে

    পুরাতন অপরাধ যত।

    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

    Latest Posts

    spot_imgspot_img

    আলোচিত খবর