ডারবান টেস্টের চতুর্থ দিনে বোলাররা ভাল করলেও ব্যর্থ হয়েছে টপ অডার ব্যাটসম্যানরা। দিন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে ২৬৩ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। বোলারদের কল্যাণে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২০৪ রানেই আটকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। ইতিহাস গড়ায় লক্ষ্যটা বাংলাদেশের দাঁড়ায় ২৭৪ রানের। কিন্তু সে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রোটিয়াদের সামনে শুরুতেই হোচট খায় সফরকারীরা। মাত্র ১১ রানে তিন উইকেট হারিয়ে দিন শেষ করে টাইগাররা। দ্বিতীয় ওভারে দলীয় চার রানে সাজঘরে ফেরেন সাদমান ইসলাম। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদুল হাসান জয় নিজের খাতায় চার রান যোগ করেই বোল্ড হন । দলীয় আট রানে ফেরেন অধিনায়ক। দিন শেষে ৫ রানে অপরাজিত রয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও রানের খাতা না খুলে মুশফিকুর রহিম। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট ইতিহাস গড়তে হলে পঞ্চম দিনে সাত উইকেটে টাইগারদের করতে হবে ২৬৩ রান।
শেষ বিকেলের স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশ একরাশ হতাশাকে সঙ্গী করলেও বোলাররা কিন্তু ঠিকই দলকে লড়াইয়ে রেখেছিলেন। বিশেষ করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেশনে মিরাজ, ইবাদত, তাসকিনের আক্রমণে স্বাগতিকরা বড় কিছু করতে পারেনি। তবে একটু আফসোস বাংলাদেশেরও আছে। দিনের শুরুতে স্লিপে শান্ত ও ইয়াসির প্রোটিয়া অধিনায়ক এলগারকে জীবন না দিলে ৬৪ রান করতে পারেন না। ৩৪ রানে শান্ত ও ৪৩ রানে ইয়াসির তার ক্যাচ ছাড়েন। সঙ্গে ১৪ রানে থাকা অবস্থায় পিটারসেনের রিভিউ না নেওয়ায় আক্ষেপে পোড়েন খালেদ।
দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশের আক্রমণ ধারালো হয়। তাতে মেলে সাফল্য। তাসকিন এলগারকে রিভিউ নিয়ে আউট করার পর শর্ট লেগে দাঁড়িয়ে পিটারসেনের দারুণ ক্যাচ নেন জয়। বাভুমাকে টিকতে দেননি ইবাদত। এই উইকেটের জন্য ইয়াসিরকে ধন্যবাদ দিতেই হবে। স্লিপে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে একহাতে যেভাবে ক্যাচ নিয়েছেন তা মনে থাকবে দীর্ঘদিন।
এরপর আসা-যাওয়ার মিছিলে প্রোটিয়াদের ইনিংস থেমে যায় ২০৪ রান। ৩টি করে উইকেট নিয়ে মিরাজ ও ইবাদত ছিলেন বোলারদের মধ্যে সেরা। এদিন গ্রাউন্ড ফিল্ডিংও ভালো হয়েছে। ডিপ কভার থেকে অতিরিক্ত ফিল্ডার সোহানের সরাসরি থ্রোতে রান আউট হন হার্মার। এরপর সাদমানের থ্রোতে আউট হন উইলিয়ামস। শেষ দিকে তাদের কেউই ভালো করতে পারেননি।
অবশ্য ব্যাটিংয়ে বিপর্যয়ের আগে ইতিহাস বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল। এ মাঠে চতুর্থ ইনিংসে জয় আছে ১১টি, ড্র আছে ৬টি। হারের রেকর্ডও খারাপ নয়, ১১টি। তবে জয়ের রেকর্ড আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে বাংলাদেশকে। দক্ষিণ আফ্রিকা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৪০ রান করে জিতেছিল। অস্ট্রেলিয়া সেই ১৯৫০ রানে ৩৩৬ রানে জিতেছিল। শ্রীলঙ্কা ২০১৯ সালে ৩০৪ রানে জিতেছিল, সেই স্মৃতি তো আজও তরতাজা ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে। তিনশর বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড এই তিনটিই।
দুইশর ঘরে রয়েছে ড্রয়ের রেকর্ড। বাকিগুলো সব দুইশর নিচে। মাত্র চারটি দলই এই মাঠে চতুর্থ ইনিংসে জয় পেয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ৭টি, অস্ট্রেলিয়া ২টি এবং ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা ১টি করে ম্যাচ জিতেছে। বাংলাদেশের সামনে ইতিহাস গড়ার হাতছানি। পারবে কি মুমিনুলের দল?
বাংলাদেশের নিজেদের রেকর্ড অবশ্য খুব ভালো নয়। চতুর্থ ইনিংসে ৩৩ ম্যাচে জিতেছে মাত্র ৪টিতে। হেরেছে ২৪ ম্যাচ। ড্র করেছে ৫টি। ২০০৯ সালে সর্বোচ্চ ২১৭ রান করে জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে বিপক্ষে। কলম্বোতে শততম টেস্ট ম্যাচ জিতেছিল ১৯১ রান তাড়া করে। এছাড়া জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০১ রান এবং নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে ৪২ রান করে জিতেছিল। এবারের লক্ষ্যটা পাহাড়সম। নিউ জিল্যান্ডের পর দক্ষিণ আফ্রিকাতেও কি টেস্ট জিততে পারবে বাংলাদেশ?