লকডাউনের মধ্যে নিজের সরকারি বাসভবনে মদ্যপানের আসর জমিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এ ঘটনায় নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির জ্যেষ্ঠ এমপিরাও তাঁর পাশে নেই। বরিসের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে তাঁরা চিঠি পাঠাতে যাচ্ছেন। এই চিঠি এমন একসময় পাঠানো হচ্ছে, যখন বরিসের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দিনক্ষণ এগিয়ে আসছে।
বরিসের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান। খবরে বলা হয়েছে, তারা জানতে পেরেছে, পার্লামেন্টের জ্যেষ্ঠ এমপিরা (ব্যাকবেঞ্চাররা) সম্মিলিতভাবে বরিসের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আনতে যাচ্ছেন। ব্যাকবেঞ্চার হচ্ছেন পার্লামেন্টের এমন সদস্য, যাঁরা মন্ত্রিসভা বা বিরোধী দলের ছায়া মন্ত্রিসভার সদস্য নন।
বরিসের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শুরু করেন যুক্তরাজ্যের জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা সু গ্রে। যদিও ওই তদন্ত প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি সপ্তাহেই ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতে পারে। ওই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ নিয়ে গত বুধবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন কাম কার্যালয় ডাউনিং স্ট্রিটে কোভিড লকডাউন বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে পার্টির অভিযোগের অভ্যন্তরীণ তদন্তের প্রতিবেদন শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘ওই তদন্ত প্রতিবেদন বরিস জনসনের কাছে এখনো যায়নি। তদন্তের ফল প্রকাশ হওয়ার আগপর্যন্ত জনগণের অপেক্ষা করা উচিত।’
এর আগে মঙ্গলবার লন্ডনের পুলিশ কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়, তারা প্রধানমন্ত্রী বরিসের ডাউনিং স্ট্রিট কার্যালয় এবং শীর্ষ সরকারি দপ্তরগুলোতে লকডাউনের সময় পার্টি আয়োজনের বিষয়টি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে তদন্ত শুরু করেছে।
বরিসের পার্টি আয়োজনের বিষয়টি নিয়ে অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে বলে দাবি করছেন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নতুন এমপিরা। তাঁরা এটাকে ষড়যন্ত্র বলেও প্রচার করছেন। তবে অভিজ্ঞ এমপিদের মধ্যে জনমত গঠন হয়েছে যে বরিসের আস্থা ভোটের মুখোমুখি হওয়া উচিত।
একজন এমপি গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘যেসব মানুষ নৈতিকতাকে শক্তিশালী হিসেবে অনুভব করেন, তাঁদের জন্য এই প্রধানমন্ত্রী কিছুই দিতে পারেন না।’
সর্বশেষ হিসাবমতে, বরিসের বিরুদ্ধে যেসব এমপি ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে দুই ডজনের বেশি সাবেক মন্ত্রীও রয়েছেন। এই এমপিদের সংখ্যা ৭০ জনের বেশি।
সূত্রগুলো বলছে, কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যপন্থী এমপিদের নিয়ে গঠিত ‘ওয়ান ন্যাশনের গ্রুপ’ থেকে এই অনাস্থার বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেওয়া হবে না। ওই গ্রুপে শতাধিক এমপি রয়েছেন। এর পরিবর্তে বরিসের পদত্যাগ চান—এমন এমপিদের নিয়ে অনাস্থা ভোটে এগোতে চান জ্যেষ্ঠ এমপিরা।
২০২০ সালের ১৯ জুন যখন জনসন জন্মদিনের পার্টি করেন, সে সময়ের বিধিনিষেধ অনুযায়ী বদ্ধ কোনো স্থানে দুজনের বেশি মানুষ সমবেত হতে পারতেন না। বিধি লঙ্ঘন করে ডাউনিং স্ট্রিটে জন্মদিনের আয়োজনের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন বরিস। তবে তিনি পদত্যাগ করবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।